বিজিনজম আন্তর্জাতিক গভীর সমুদ্র বহুমুখী বন্দরের উদ্বোধন

বিজিনজম আন্তর্জাতিক গভীর সমুদ্র বহুমুখী বন্দরের উদ্বোধন
সর্বশেষ আপডেট: 02-05-2025

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি বিজিনজম আন্তর্জাতিক গভীর সমুদ্র বহুমুখী বন্দরের উদ্বোধন করেছেন। এই বন্দর কেরাল রাজ্যের বিজিনজমে অবস্থিত এবং রাজ্যের অর্থনীতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গভীর সমুদ্র বন্দর: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার কেরালে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিজিনজম আন্তর্জাতিক গভীর সমুদ্র বহুমুখী বন্দরের উদ্বোধন করেন। এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও উপস্থিত ছিলেন। এই প্রকল্পটি কেরাল সরকার এবং আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড (APSEZ)-এর মধ্যে জনসাধারণ-বেসরকারি অংশীদারিত্বের আওতায় সম্পন্ন হয়েছে। পিএম মোদী এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পটি জাতিকে উৎসর্গ করে রাজ্যের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিক নির্দেশনার কথা বলেছেন।

বিজিনজম বন্দরের উদ্বোধন: অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে আরও একধাপ

এই নতুন আন্তর্জাতিক গভীর সমুদ্র বন্দরটি ৮,৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এবং এটি ভারতের সমুদ্র বাণিজ্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করবে। এই বন্দরটি দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে আবির্ভূত হবে, যা বিশেষ করে সমুদ্র বাণিজ্যকে উন্নীত করতে সাহায্য করবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই উপলক্ষে বলেন, বিজিনজম বন্দরের উদ্বোধনের ফলে দেশে সমুদ্র পরিবহনের জন্য একটি নতুন বিপ্লব আসবে, যার ফলে ভারতের সমুদ্র শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং এখানকার অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে। এই প্রকল্পটি কেবল কেরালের জন্যই নয়, সমগ্র দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতদিন পর্যন্ত ভারতের ৭৫% ট্রান্সশিপমেন্ট বিদেশী বন্দরে হতো, যার ফলে দেশকে ব্যাপক ক্ষতি হতো।

মোদী এই উপলক্ষে বলেন, এখন এই পরিস্থিতি বদলাতে চলেছে এবং ভারতের টাকা ভারতেই থাকবে। তদুপরি, বিজিনজম বন্দর থেকে কেরাল এবং আশপাশের এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যার ফলে স্থানীয় মানুষ উপকৃত হবে।

কেরালের সমুদ্র ইতিহাস এবং বন্দরের গুরুত্ব

প্রধানমন্ত্রী মোদী তার বক্তব্যে কেরালের সমুদ্র ইতিহাসের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভারত গোলামির আগে হাজার হাজার বছর ধরে সমৃদ্ধি উপভোগ করেছিল এবং সেই সময় দেশের জিডিপিতে ভারতের একটি বড় অংশ ছিল। এই সমৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল ভারতের সমুদ্র ক্ষমতা এবং বন্দর নগরীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এই প্রসঙ্গে কেরালের অবদান ছিল অনেক বেশি, কারণ এই অঞ্চলটি সর্বদা সমুদ্রের সাথে বাণিজ্য এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

তিনি আরও বলেন, ভগবান আদি শঙ্করাচার্যের জন্মবার্ষিকীর দিন তিনি কেরালে তাঁর জন্মভূমি পরিদর্শনের সৌভাগ্য লাভ করেছেন। আদি শঙ্করাচার্য দেশের বিভিন্ন স্থানে মঠ স্থাপন করে ভারতীয় সংস্কৃতি ও আদর্শকে নতুন দিগন্ত দেখিয়েছিলেন এবং এটি কেরালের ভূমি থেকেই শুরু হয়েছিল।

বিজিনজম বন্দর থেকে লাভ

বিজিনজম বন্দরের উদ্বোধন কেবল একটি বন্দর নির্মাণ নয়, বরং এটি কেরাল এবং সমগ্র দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক লাভ নিয়ে আসবে। প্রথম লাভ হলো, এখন বিদেশী বন্দরের উপর নির্ভরতা কমবে এবং ভারত নিজস্ব বন্দরের মাধ্যমে সমুদ্র বাণিজ্য সম্পন্ন করতে পারবে। এর ফলে কেবল বাণিজ্য উন্নত হবে না, বরং স্থানীয় শিল্পকেও উৎসাহিত করা হবে।

এই প্রকল্পের ফলে কেরালে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। বন্দরের চারপাশে অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে কেবল বন্দর কর্তৃপক্ষ নয়, অন্যান্য ব্যবসায়েও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। তদুপরি, এই বন্দরের মাধ্যমে পরিবেশগত সচেতনতাও বৃদ্ধি পাবে, কারণ এই প্রকল্পটি টেকসই এবং পরিবেশগতভাবে নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছে।

ভবিষ্যতে সমুদ্র বাণিজ্য ও উন্নয়নের দিক

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই উপলক্ষে আরও বলেন, বিজিনজম বন্দরের মাধ্যমে ভারত সমুদ্র বাণিজ্যে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় অগ্রগতি অর্জন করবে। এই বন্দরটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মালবাহী জাহাজের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যার ফলে ভারতের জন্য নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ উন্মোচিত হবে এবং এই ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পটি ভারতের আত্মনির্ভর হওয়ার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানকে আরও শক্তিশালী করবে।

Leave a comment