নওয়াদার টিএস কলেজে সেমিনারের সময় বিহারের রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান গেরুয়া রংকে ত্যাগের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং রাম-পান্ডবদের জীবনের উদাহরণ দিয়ে সংবিধানকে ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু বলে অভিহিত করেছেন।
নওয়াদা (বিহার) – টিএস কলেজ, হিশুয়ায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে সোমবার বিহারের রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান অংশগ্রহণ করেন। "ভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা: একটি সমালোচনামূলক মূল্যায়ন" বিষয়ক এই সেমিনারে রাজ্যপাল তার বক্তব্যে ধর্ম, সংবিধান, সংস্কৃতি এবং গণতন্ত্রের গুরুত্বের উপর বিস্তারিত আলোচনা করেন। পাশাপাশি, পালগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রসঙ্গে সরকারের ভূমিকা নিয়ে আস্থা প্রকাশ করেন।
পালগাম হামলার প্রসঙ্গে রাজ্যপালের বক্তব্য
রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান জম্মু-কাশ্মীরের পালগামে সম্প্রতি সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলাকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে বলেন, কেন্দ্র সরকার অবশ্যই এর উপর কার্যকরী ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর দেশের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে এবং এ ধরণের ঘটনায় তাঁর সিদ্ধান্ত কঠোর ও স্পষ্ট হয়।
শাস্ত্রের মাধ্যমে ধর্মের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা
তার বক্তব্যে রাজ্যপাল ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের উল্লেখ করেন। তিনি শ্রোতাদের শ্লোকের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন যে ধর্ম শুধুমাত্র ধর্মীয় কर्मकांड নয়, বরং আচরণ, ত্যাগ ও সামাজিক দায়িত্বের নাম। তিনি বলেন, “ধর্ম সেই যা সমাজকে একত্রিত করে, ঐক্য বজায় রাখে এবং সবাইকে নিয়ে এগিয়ে চলে।”
গেরুয়া রংকে ত্যাগের প্রতীক বলে উল্লেখ
রাজ্যপাল গেরুয়া রঙের গুরুত্বের উপরও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রতীক নয়, বরং ত্যাগ ও আত্মসমর্পণের প্রতীক। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ছাত্র নিদ্রার ত্যাগ করে জ্ঞান অর্জন করে, সৈনিক দেশের জন্য জীবনের ত্যাগ করে — এটাই গেরুয়ার সারমর্ম।
ভগবান রাম ও পান্ডবদের জীবন থেকে অনুপ্রেরণার বার্তা
রাজ্যপাল ভগবান শ্রী রামকে মর্যাদা পুরুষোত্তম বলে উল্লেখ করে বলেন, ক্ষমতা সেবার মাধ্যম, অধিকারের নয়। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জনতার প্রতি জবাবদিহি থাকতে হবে এবং ক্ষমতার ব্যবহার জনকল্যাণের জন্য হওয়া উচিত।” পাশাপাশি তিনি মহাভারতে কুন্তী কর্তৃক যুধিষ্ঠিরকে প্রদত্ত উপদেশের উল্লেখ করে পান্ডবদের ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রশংসা করেন।
সংবিধানকে ঐতিহ্যের প্রতিফলন বলে উল্লেখ
রাজ্যপাল খান তার বক্তব্যে ভারতীয় সংবিধানকে আমাদের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “সংবিধান ভারতের বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি ও আদর্শকে ধারণ করে। এর উদ্দেশ্য সকলকে সমান অধিকার, সুযোগ ও সুরক্ষা প্রদান করা। একটি আদর্শ শাসন ব্যবস্থা হল সেই যে, কোনও পক্ষপাত ছাড়াই সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর চাহিদা বুঝতে পারে।”
গণতন্ত্রকে শাসন ব্যবস্থার সর্বোত্তম বলে উল্লেখ
রাজ্যপাল গণতন্ত্রকে শাসনের সর্বোত্তম ব্যবস্থা বলে উল্লেখ করে বলেন, এটি সেই ব্যবস্থা যেখানে সাধারণ জনগণের নিজের কথা বলার, নেতৃত্ব নির্বাচন করার এবং উন্নয়নে অংশগ্রহণ করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে ক্ষমতা সেবার মাধ্যম, এবং এটাই এর সবচেয়ে বড় শক্তি।