‘কেসরী বীর’ একটি ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র, যা ১৪শ শতাব্দীতে সোমনাথ মন্দিরে হওয়া আক্রমণ এবং তার রক্ষার জন্য বীরত্ব প্রদর্শনকারী যোদ্ধাদের গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি। অভিনেতা সূরজ পাঞ্চোলী দীর্ঘ বিরতির পর এই ছবি দিয়ে কমব্যাক করছেন।
- ছবির পর্যালোচনা: কেসরী বীর
- স্টার রেটিং: ৩/৫
- পর্দায়: ২৩.০৫.২০২৫
- পরিচালক: প্রিন্স ধীমান
- ধরণ: ঐতিহাসিক নাটক
মনোরঞ্জন: সূরজ পাঞ্চোলী, সুনীল শেঠি এবং বিবেক ওবেরয়ের মুখ্য ভূমিকায় অভিনীত ‘কেসরী বীর’ চলচ্চিত্রটি আজ সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে। এই ছবিটি ১৪শ শতাব্দীতে ঘটা একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধের গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে সোমনাথ মন্দির রক্ষার জন্য বীর যোদ্ধারা শত্রুর সাথে লড়াই করেছিল। দীর্ঘদিন পর সূরজ পাঞ্চোলী এই ছবি দিয়ে বলিউডে ফিরে এসেছেন, যা তার ক্যারিয়ারের জন্য একটি বড় আশা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই পর্যালোচনায় আমরা জানবো ছবির গল্প, অভিনয়, পরিচালনা এবং প্রযুক্তিগত দিকগুলি কতটা উন্নত এবং ‘কেসরী বীর’ দর্শকদের ঐতিহাসিক বীরত্বের অনুভূতির সাথে যুক্ত করতে পেরেছে কি না।
গল্প: বীরত্ব ও ত্যাগের কাহিনী
‘কেসরী বীর’ ছবির গল্প হামীরজি গোহিল (সূরজ পাঞ্চোলী)-এর চারপাশে গড়ে উঠেছে, যিনি একজন রাজপুত রাজা এবং ১৪শ শতাব্দীতে সোমনাথ মন্দির রক্ষার জন্য জাফর খান (বিবেক ওবেরয়)-এর নেতৃত্বে আসা মুসলিম আক্রমণকারীদের মোকাবেলা করেন। ছবিতে হামীরজির সাথে ভীল সর্দার ভেগড়াজী (সুনীল শেঠি)-এর ভূমিকাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যিনি শিবভক্ত এবং একজন নির্ভীক যোদ্ধা। গল্পে মন্দির রক্ষার জন্য যুদ্ধ, প্রেমের সম্পর্ক এবং ত্যাগের দৃশ্যের মিশ্রণ দেখানো হয়েছে।
ছবির শুরুতে একটি ডিসক্লেইমার দেওয়া হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে সিনেমাটিক লিবারটি নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল গল্পের অনেক অংশ ইতিহাস থেকে কিছুটা বিচ্যুত করে তৈরি করা হয়েছে। এই সিনেমাটিক লিবারটি ছবির অভিজ্ঞতাকে কিছুটা দুর্বল করে তোলে, বিশেষ করে যারা বীর হামীরজি গোহিলের সত্যিকারের গল্প সম্পর্কে জানেন তাদের জন্য।
ছবির প্রথম অংশে রোমান্স এবং কিছু নাটকীয় দিক জোর করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা গল্পের গুরুত্বকে প্রভাবিত করে। কিন্তু দ্বিতীয় অংশে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ছবিটি তার আসল শক্তি দেখাতে শুরু করে। যুদ্ধের দৃশ্য এবং হামীরজির বীরত্বকে তুলে ধরা দৃশ্যগুলি চিত্তাকর্ষক।
তবে, কিছু দৃশ্য যেমন ভীল সর্দারের উৎসবে আফ্রিকান নৃত্যের অন্তর্ভুক্তি এবং রোমান্টিক ট্র্যাক ছবির গুরুত্বকে কমিয়ে দেয়। এছাড়াও, ক্লাইম্যাক্সে খলনায়ক জাফর খানের সাথে হওয়া যুদ্ধ এবং হামীরজির আত্মত্যাগকে নাটকীয়ভাবে দেখানো হয়েছে, যা দর্শকদের জন্য আবেগঘন।
পরিচালনা ও চিত্রনাট্য: দুর্বল কিন্তু পরিশ্রমী প্রচেষ্টা
ছবির পরিচালনা এবং চিত্রনাট্য ছবির সবচেয়ে দুর্বল দিক। পরিচালক গল্পে ঐতিহাসিক সত্য এবং মনোরঞ্জনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনি পুরোপুরি সফল হতে পারেননি। চিত্রনাট্য অনেক সময় অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং কিছু অংশে অপ্রয়োজনীয় নাটকের কারণে গল্পের গতি ধীর হয়ে যায়।
ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস (VFX) গড় মানের, যা বড় যুদ্ধের দৃশ্যে পুরো শক্তির সাথে দেখা যায় না। তবে, ছবির কিছু অ্যাকশন সিকুয়েন্স ভালো, যেখানে অভিনেতারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে অভিনয় করেছেন।
অভিনয়: সূরজ পাঞ্চোলীর কমব্যাক চিত্তাকর্ষক
‘কেসরী বীর’ ছবিতে হামীরজি গোহিলের ভূমিকা পালন করে সূরজ পাঞ্চোলী তার ক্যারিয়ারে একটি নতুন দিক দেখিয়েছেন। সূরজ তার চরিত্রে শারীরিকভাবে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মিশিয়ে দিয়েছেন। তার উচ্চারণ, দেহভাষা এবং আবেগ চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছে। বিশেষ করে অ্যাকশন সিকুয়েন্সে তার উপস্থিতি ছবিকে শক্তিশালী করে। তবে, আবেগঘন দৃশ্যে তার অভিনয় কিছুটা দুর্বল, কিন্তু সামগ্রিকভাবে তার কমব্যাককে সুদৃঢ় বলা যায়।
সুনীল শেঠিও হামীরজির সঙ্গী ভীল সর্দার ভেগড়াজীর ভূমিকায় চিত্তাকর্ষক অভিনয় করেছেন। তার শিবভক্ত এবং নির্ভীক যোদ্ধার চরিত্র ছবিকে গভীরতা দেয়। বিবেক ওবেরয় খলনায়কের ভূমিকায় বেশ ভয়ঙ্কর এবং শক্তিশালী অভিনয় করেছেন, যা ছবির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আকাঙ্ক্ষা শর্মা রাজলের চরিত্রে ভালো চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাকে এখনও আরও অনুশীলনের প্রয়োজন।
সংগীত: ছবির গুরুত্বপূর্ণ অংশ
‘কেসরী বীর’ ছবির সংগীত ছবির আবেগকে জীবন্ত করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ‘হর হর শম্ভু’ গান দর্শকদের অন্তরে ছুঁয়ে গেছে এবং শিবভক্তদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। গরবা এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী গানও ছবিতে রঙ জমিয়েছে। তবে, সংগীতে কিছু জায়গায় অতিরিক্ত নাটকীয়তাও অনুভূত হয়, কিন্তু সামগ্রিকভাবে এটি ছবির মুডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
‘কেসরী বীর’ এমন একটি ছবি যা বীরত্ব, ত্যাগ এবং দেশপ্রেমের গল্পকে বড় পর্দায় জীবন্ত করার চেষ্টা করেছে। ছবিতে সূরজ পাঞ্চোলীর সুদৃঢ় কমব্যাক, সুনীল শেঠির শিবভক্তের ভূমিকা এবং বিবেক ওবেরয়ের শক্তিশালী খলনায়কের ভূমিকা এটিকে দেখার মতো করে তুলেছে।