মধ্যপ্রদেশে চিতার জন্য তৃতীয় সংরক্ষিত আবাস: নৌরা দেহী অভয়ারণ্য

মধ্যপ্রদেশে চিতার জন্য তৃতীয় সংরক্ষিত আবাস: নৌরা দেহী অভয়ারণ্য
সর্বশেষ আপডেট: 13-06-2025

কুনো ও গান্ধীসাগরের পর এবার মধ্যপ্রদেশে চিতার জন্য আরও একটি সংরক্ষিত আবাস তৈরি হচ্ছে। সাগর, দামোহ ও নর্সিংহপুর জেলার মাঝে অবস্থিত নৌরা দেহী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যকে এখন চিতার পুনর্বাসনের জন্য তৃতীয় বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ) এই সিদ্ধান্তে মোহর মেরেছে এবং এর জন্য ৩০ বর্গ কিলোমিটারের একটি কোর এরিয়াও নির্ধারণ করেছে।

কেন নৌরা দেহী?

প্রায় ১২০০ বর্গ কিলোমিটারে বিস্তৃত নৌরা দেহী অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, উন্মুক্ত ঘাসের মাঠ এবং জলের উৎস রয়েছে। এই এলাকাটি প্রাকৃতিকভাবে বসবাসযোগ্য এবং এখানে ইতোমধ্যেই চিতা, বন্য শুয়োর, নীলগাই, চিঙ্কারা ইত্যাদি শিকার প্রজাতির প্রাণী রয়েছে—যা চিতার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশৃঙ্খল তৈরি করে।

তদুপরি, নৌরা দেহীর ভৌগোলিক অবস্থান অপেক্ষাকৃত শান্ত। এখানে মানব হস্তক্ষেপও সীমিত, যা এই এলাকাকে চিতার জন্য নিরাপদ ও অনুকূল বাসস্থানে পরিণত করতে পারে।

চিতার জন্য তৃতীয় নতুন আবাস

এনটিসিএর বিশেষজ্ঞ ও মধ্যপ্রদেশ বন বিভাগের যৌথ দল সম্প্রতি এলাকা পরিদর্শন করে এখানে চিতার পুনর্বাসনের সম্ভাবনার গভীর মূল্যায়ন করেছে। পরিদর্শনের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে প্রথম পর্যায়ে ৩০ বর্গ কিলোমিটারকে কোর এরিয়া হিসেবে উন্নত করা হবে, যেখানে চিতাকে নিয়ে আসা হবে। এই এলাকার চারপাশে বাফার জোনও তৈরি করা হবে যাতে তাদের প্রাকৃতিক আচরণ ও শিকারের জন্য যথেষ্ট স্থান থাকে।

আফ্রিকান অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল চিতা

যেমনটি জানা, ভারতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া চিতাকে আফ্রিকার নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুটি পর্যায়ে নিয়ে এসে কুনো ও গান্ধীসাগর অভয়ারণ্যে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যদিও কুনোতে কিছু চিতার মৃত্যু উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছিল, তবে গান্ধীসাগরে এখন পর্যন্ত চিতার অবস্থা সন্তোষজনক ছিল। এখন নৌরা দেহীকে তৃতীয় স্থান হিসেবে উন্নত করা এই পুরো প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশ।

এতে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, যদি কোনও এক জায়গায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বা খাপ খাইয়ে নিতে অসুবিধা হয়, তাহলে অন্য কেন্দ্রগুলি তা সামলাতে পারবে।

কী হবে পরবর্তী পদক্ষেপ?

  • পরিবেশগত মূল্যায়ন ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের অধ্যয়ন।
  • বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে বেড়া ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার স্থাপন।
  • সম্ভাব্য আফ্রিকান চিতাকে পশুচিকিৎসা পরীক্ষার পর এখানে স্থানান্তর করা।
  • স্থানীয় গ্রামবাসীদের প্রকল্পের প্রতি সংবেদনশীল করা ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।

স্থানীয় উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের ভারসাম্য

এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকেই উৎসাহিত করবে না, বরং স্থানীয় অঞ্চলে পর্যটন ও কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগও তৈরি করবে। চিতার উপস্থিতিতে অভয়ারণ্যটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে এবং এই এলাকাটি ‘বন্যপ্রাণী গন্তব্য’ হিসেবে পরিণত হতে পারে।

বন বিশেষজ্ঞদের মতে, নৌরা দেহীর নির্বাচন একটি সুষম ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এতে চিতার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য অর্জন করা যাবে। যদি এখানকার আবহাওয়া ও পরিবেশ চিতার জন্য অনুকূল প্রমাণিত হয়, তাহলে আগামী বছরগুলিতে এই কেন্দ্রটি চিতার প্রজনন ও প্রাকৃতিক বাসস্থানের দিক থেকে এক মাইলফলক হতে পারে।

Leave a comment