শেয়ার বাজারের সাথে যুক্ত এই খবর তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যারা সক্রিয়ভাবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন। জানা গেছে, সোমবার অর্থাৎ ১৬ই জুন সকালে বাজার খুলতেই শেয়ারের দামে তীব্র উত্থান-পতন দেখা যেতে পারে।
নয়াদিল্লি: আগামী সপ্তাহে ভারতীয় শেয়ার বাজারে তীব্র উত্থান-পতন দেখা যেতে পারে। ১৬ই জুন থেকে শুরু হওয়া কারবারী সপ্তাহে দেশীয় ও বিশ্বব্যাপী বেশ কিছু এমন বিষয় রয়েছে যা বাজারের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে। গত শুক্রবার ভারতীয় শেয়ার বাজারে যে তীব্র ধস নেমেছে তা বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে দিয়েছে। BSE সেনসেক্স এবং NSE নিফটি উভয়েই প্রায় এক শতাংশ করে নেমেছে, যার ফলে বাজারে নেতিবাচক চাপ স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে।
গত সপ্তাহের ধস একটি সতর্কবার্তা
BSE সেনসেক্স গত সপ্তাহে মোট ১০৭০ পয়েন্ট অর্থাৎ প্রায় ১.৩০ শতাংশ নেমেছে, অন্যদিকে NSE নিফটি ২৮৪ পয়েন্ট অর্থাৎ ১.১৩ শতাংশ ক্ষতি করেছে। এর প্রধান কারণ হলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং কাঁচা তেলের দাম বৃদ্ধি। এই কারণগুলোর ফলে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে তারা ঝুঁকি এড়াতে শুরু করেছে।
আগামী সপ্তাহে কোন বিষয়গুলোতে বিনিয়োগকারীদের নজর থাকবে
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘর্ষ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দিচ্ছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় তাহলে এর প্রভাব কেবল কাঁচা তেলের উপর সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্বব্যাপী মূলধন বাজারেও প্রচণ্ড অস্থিরতা দেখা দেবে।
কাঁচা তেলের দাম: ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বৃদ্ধি ভারতের মতো আমদানি-নির্ভর দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। যদি দাম আরও বৃদ্ধি পায়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রিজার্ভ ব্যাংককে আর্থিক নীতিতে কঠোরতা অবলম্বন করতে হতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতির তথ্য: ভারত এবং আমেরিকা উভয় স্থানেই মুদ্রাস্ফীতির সর্বশেষ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এখন বাজার মূল্যায়ন করছে যে আগামী নীতিগত সিদ্ধান্ত কোন দিকে যাবে। যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ফেডারেল রিজার্ভ এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠক: এই সপ্তাহে আমেরিকার ফেড, জাপান এবং ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সুদের হার ঘোষণা করবে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন যে এই বৈঠকগুলিতে সুদের হার নিয়ে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী ইকুইটি বাজারের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।
বিনিয়োগকারীদের কৌশলের উপর প্রভাব
Almondz ইন্সটিটিউশনাল ইকুইটিজের কেতন ভিকম বলেছেন যে বিশ্বব্যাপী প্রবণতার প্রভাব ভারতীয় বাজারে পড়বে। বিশেষ করে ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের প্রতিধ্বনি ভারতেও পৌঁছাবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পারে এবং FMCG, ফার্মা এবং IT-র মতো রক্ষণাত্মক খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে।
অন্যদিকে, Geojit ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেজের গবেষণা প্রধান বিনোদ নায়ারের মতে, ফেডের বৈঠক এবং বিশ্বব্যাপী ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক থাকবেন। তিনি জানিয়েছেন যে বাজার বর্তমানে প্রিমিয়াম মূল্যায়নে কারবার করছে এবং এমন পরিস্থিতিতে কোনও নেতিবাচক খবরের প্রভাব শেয়ার বাজারে অবিলম্বে প্রতিফলিত হতে পারে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ কী বলে
টেকনিক্যাল বিশ্লেষকদের মতে, নিফটি 50-এর পরবর্তী সাপোর্ট লেভেল প্রায় 22,100-এর কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে। যদি এই স্তর ভেঙে যায় তাহলে নিফটি 21,850 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। অন্যদিকে, সেনসেক্সের জন্য 73,200 একটি শক্তিশালী সাপোর্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদি বাজার ইতিবাচক সংকেত থেকে উৎসাহিত হয় তাহলে নিফটি 22,500-এর উপরে যেতে পারে।
খাতভিত্তিক দিকে তাকালে
- ব্যাংকিং খাত: ফেড এবং RBI-এর নীতির সরাসরি প্রভাব ব্যাংকিং শেয়ারে দেখা যাবে। সুদের হারের যে কোনো ধরণের বৃদ্ধির ফলে এই শেয়ারগুলিতে চাপ পড়তে পারে।
- IT খাত: ডলারের বিপরীতে টাকার চলাচল, বিদেশী চাহিদা এবং আমেরিকার নীতি IT শেয়ারের চলাচল নির্ধারণ করবে।
- শক্তি খাত: কাঁচা তেলের দামের উত্থান-পতন এই খাতে প্রভাব ফেলবে। সরকারি তেল কোম্পানির শেয়ারে বেশি উত্থান-পতন দেখা যেতে পারে।
- ধাতু এবং অটোমোবাইল খাত: বিশ্বব্যাপী চাহিদার পরিবর্তন এবং চীনের অর্থনৈতিক নীতি এই খাতগুলির দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।
বিনিয়োগকারীরা কী করবেন
স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের এই সপ্তাহে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং যে কোনো বড় খবরে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা মূল্যভিত্তিক বিনিয়োগের কৌশলে লেগে থাকুন এবং উন্নতমানের শেয়ারে দাম কমলে কেনাকাটা করুন।
স্টপ লস এবং লক্ষ্য স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করেই ট্রেডিংয়ে অবতরণ করুন।