মাসিক শিবরাত্রি ২০২৫: বিবাহের বাধা দূর করার উপায়

মাসিক শিবরাত্রি ২০২৫: বিবাহের বাধা দূর করার উপায়
সর্বশেষ আপডেট: 24-05-2025

প্রতি মাসে আগমনী মাসিক শিবরাত্রির দিন ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পূজা-অর্চনার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিনটি শুধুমাত্র ধর্মীয় ভক্তির প্রতীক নয়, জীবনের নানাবিধ সমস্যা থেকে মুক্তির একটি কার্যকর মাধ্যমও বলে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে যাঁদের বিবাহে বাধা আসছে অথবা যাঁরা দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করতে চান, তাঁদের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে করা হয় মাসিক শিবরাত্রির দিন পূজা ও বিশেষ উপায়ের মাধ্যমে ভগবান শিবের বিশেষ কৃপা লাভ করা যায়, যা জীবনের সকল সংকট দূর করে সমৃদ্ধি ও সুখ-শান্তি প্রদান করে।

মাসিক শিবরাত্রি ২০২৫-এর তিথি ও শুভ সময়

জ্যোতিষ ও পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, মে ২০২৫-এ মাসিক শিবরাত্রি জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে, অর্থাৎ ২৫শে মে বিকাল ৩:৫১ মিনিটে শুরু হয়ে ২৬শে মে দুপুর ১২:১১ মিনিটে শেষ হবে। এই দিন রাত ১১:৫৮ মিনিট থেকে ১২:৩৮ মিনিট পর্যন্ত সময় বিশেষভাবে শুভ বলে মনে করা হয়, যখন শিবলিঙ্গের পূজা ও ব্রত বিধিপূর্বক করা হয়। এই শুভ সময়ে ভগবান শিবের উপাসনা করলে मनোवांछित ফল शीघ्र प्राप्त হয়।

বিবাহে আসা বাধা ও তার নিবারণ

বিবাহ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বন্ধন, কিন্তু অনেক সময় বিবাহ সংক্রান্ত বাধা ও প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। কেউ কেউ বারবার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, মনোমালিন্য, অথবা বিবাহের দীর্ঘসূত্রতা जैसी সমস্যার মুখোমুখি হন। জ্যোতিষশাস্ত্রে এই সমস্যাগুলির পিছনে গ্রহদোষ, বিশেষ করে মঙ্গলদোষের প্রভাব মনে করা হয়। মঙ্গলদোষে প্রভাবিত জন্মপত্রে বিবাহ সংক্রান্ত অনেক বাধা আসে, যার ফলে ব্যক্তির দাম্পত্য জীবনে সুখের অভাব দেখা দেয়।

মাসিক শিবরাত্রির দিন বিশেষ পূজা ও উপায় করলে এই বাধাগুলি দূর করা যায়। এর সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হল ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পূজা করা, যাঁদের কৃপায় মঙ্গলদোষ শান্ত হয় এবং বিবাহে বাধা দূর হয়।

মঙ্গলদোষ নিবারণের জন্য বিশেষ পূজাবিধি

মঙ্গলদোষ অর্থাৎ জন্মপত্রে মঙ্গল গ্রহের অবস্থানের ফলে উদ্ভূত দাম্পত্য ও পারিবারিক সমস্যা। যদি আপনার বিবাহে বারবার বাধা আসে অথবা দাম্পত্য জীবনে মনোমালিন্য চলে, তাহলে মাসিক শিবরাত্রির দিন কিছু বিশেষ পূজাবিধি ও উপায় অবলম্বন করে আপনি এই দোষ শান্ত করতে পারেন।

  1. পূজার প্রস্তুতি কীভাবে করবেন: প্রথমে সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন, বিশেষ করে সূর্যোদয়ের আগে। তারপর ভালো করে স্নান করুন এবং পরিষ্কার হালকা রঙের পোশাক পরুন। পূজার স্থানটি গঙ্গাজল দিয়ে পরিষ্কার করুন। সেখানে ভগবান শিব ও মা পার্বতীর ছবি অথবা মূর্তি রাখুন। এখন কিছুক্ষণ শান্তভাবে বসে ভগবান শিবের ধ্যান করুন। এটাই পূজার সঠিক সূচনা।
  2. শিবলিঙ্গের অভিষেক করুন: একটি তামা অথবা পিতলের পাত্রে গঙ্গাজল নিন এবং তাতে কিছুটা লাল চন্দন ও কিছু লাল ফুল মেশান। এবার এই জল দিয়ে ধীরে ধীরে শিবলিঙ্গের অভিষেক করুন। পাশাপাশি ‘ॐ নমঃ শিবায়’ মন্ত্রের ১০৮ বার জপ করুন। এই উপায়টি মঙ্গলদোষ শান্ত করে। পূজার শেষে প্রদীপ জ্বালিয়ে ভগবান শিবের আরতি করুন।
  3. দান ও সেবায় পাবেন পূর্ণ ফল: পূজার পর কোনো দরিদ্র অথবা অভাবী ব্যক্তিকে খাবার, পোশাক, ঔষধ অথবা পানি जैसी প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দান করুন। ইচ্ছা করলে কোনো বৃদ্ধ অথবা বিধবার সাহায্য করুন। এ ধরনের সেবা কাজে পুণ্য বৃদ্ধি পায় এবং মঙ্গলদোষের প্রভাব কমে। পাশাপাশি এর ফলে আপনার বাড়িতে সুখ, শান্তি ও প্রেম বজায় থাকে।

ইচ্ছামতো জীবনসঙ্গী লাভের জন্য উপায়

যদি আপনি আপনার জন্য একজন বুদ্ধিমান ও পছন্দের জীবনসঙ্গীর কামনা করেন, তাহলে মাসিক শিবরাত্রির দিন আপনার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিন শিবলিঙ্গের অভিষেক গঙ্গাজল ও মধু দিয়ে করুন, কারণ মধু ভগবান শিবকে অত্যন্ত প্রিয়। অভিষেক করার সময় মনে পূর্ণ ভক্তি সহকারে আপনার ইচ্ছা প্রকাশ করুন এবং ভগবানের কাছে প্রার্থনা করুন যেন আপনাকে এমন একজন জীবনসঙ্গী मिলে যা আপনার জীবনকে প্রেম ও বোঝাপড়া দিয়ে পরিপূর্ণ করে।

অভিষেকের পর ভগবান শিবের বিধিপূর্বক আরতি করুন এবং তাঁকে ভোগ অর্পণ করুন, যেমন ফল অথবা মিষ্টান্ন। যদি এই পূজা তুলসী গাছের পাশে করা হয় তাহলে তা আরও ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়। তুলসী গাছ মা লক্ষ্মী ও দেবী পার্বতীর প্রতীক, তাই এর দ্বারা শিব-পার্বতীর বিশেষ কৃপা লাভ করা যায়। এই উপায়টি আপনার मनोकामना পূরণে সহায়ক হতে পারে।

বিবাহে বাধা দূর করার জন্য কেসর ও দুধের অভিষেক

যদি আপনার বিবাহে বারবার বাধা আসে অথবা কথা বলে বলে বিষয়টি বিগড়ে যায়, তাহলে মাসিক শিবরাত্রির দিন কেসর ও দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গের অভিষেক করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়। দুধ শুদ্ধতার প্রতীক এবং কেসর শুভতার। যখন এই দুটি জিনিস দিয়ে শিবলিঙ্গের অভিষেক করা হয়, তখন তা নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং ইতিবাচকতা বৃদ্ধি করে, যার ফলে বিবাহের উত্তম যোগ সৃষ্টি হয়।

এই উপায়টি বিশেষ করে তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী, যাদের বিবাহ কোনো কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিলম্বিত হচ্ছে। পূজার পর ভগবান শিবের আরতি করুন এবং মনে শান্তভাবে বিবাহের সফলতার জন্য প্রার্থনা করুন। এই পূজার ফলে শুধুমাত্র বিবাহ সংক্রান্ত বাধা দূর হয় না, বরং ঘর-সংসারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধিও বজায় থাকে।

মাসিক শিবরাত্রিতে করুন এই পুণ্যকর্ম

মাসিক শিবরাত্রিতে শুধুমাত্র পূজা-পাঠ নয়, ব্রত রাখাও অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। ব্রতের মাধ্যমে মন ও শরীর উভয়েরই শুদ্ধি হয়, যার ফলে ভক্ত ভগবান শিবের কৃপার যোগ্য হন। এই দিন সারাদিন ভজন-কীর্তন করা, শিব চালিসা অথবা শিবস্তুতি পাঠ করা এবং কিছুক্ষণ ধ্যান করা অত্যন্ত উপকারী। এর ফলে মানসিক শান্তি লাভ হয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও, এই দিন অভাবীদের খাদ্য, বস্ত্র অথবা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দান করা বিশেষ পুণ্যকর। এটি শুধুমাত্র পাপ ক্ষয় করে না, বরং আপনার জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও ইতিবাচক শক্তির প্রবাহ বৃদ্ধি করে। মাসিক শিবরাত্রি এমন একটা अवसर যখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভক্তি ও সেবায়ও বড় ফল পাওয়া যায়।

মাসিক শিবরাত্রি ২০২৫-এর দিন বিবাহে আসা বাধা দূর করার ও ইচ্ছামতো জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য একটি অমূল্য अवसर। এই দিন সম্পাদিত সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়গুলির ফলে শুধুমাত্র মঙ্গলদোষ শান্ত হয় না, বরং দাম্পত্য জীবনেও সুখ আসে। ভগবান শিব ও মা পার্বতীর অর্চনা, শিবলিঙ্গের অভিষেক, ব্রত ও দান-পুণ্য করার ফলে জীবনের নানা সংকট কমে যায় এবং সাফল্যের পথ উন্মোচিত হয়।

Leave a comment