প্রতি বছর ৬ই মে জাতীয় নার্স দিবস (National Nurses Day) পালিত হয়। এই দিনটি বিশেষ করে সেসব নার্সদের উৎসর্গীকৃত যারা প্রতিদিন অসুস্থ ও দরিদ্র রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন। একজন নার্সের কাজ শুধুমাত্র ওষুধ দেওয়া বা ইনজেকশন দেওয়া নয়, বরং এটি এমন একটি পেশা যেখানে ভালোবাসা, সেবা, ধৈর্য্য ও নিষ্ঠার প্রয়োজন।
নার্স: প্রতিটি রোগীর যত্নের সবচেয়ে বড় শক্তি
যখন কেউ অসুস্থ হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়, তখন সর্বপ্রথম যার মুখ দেখে সে একজন নার্সের। নার্সরা শুধুমাত্র রোগীর যত্ন নেয় না, তারা তাদের সহায়তা করে। শিশু হোক বা বৃদ্ধ, প্রতিটি রোগীর নার্সের সাথে প্রথমেই একটা অন্তরঙ্গতা তৈরি হয়। নার্সের কাজ শুধুমাত্র ওষুধ দেওয়া বা ইনজেকশন দেওয়া নয়। তারা রোগীর প্রতিটি মুহূর্তের যত্ন নেয় – সময়মতো ওষুধ দেওয়া, তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার খেয়াল রাখা, তাদের খাওয়ানো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের মানসিকভাবে শক্তিশালী রাখা।
যখন রোগীরা ব্যথায় থাকে, তখন নার্সের একটা হাসি বা তার দুটি সান্ত্বনামূলক কথা তাদের সাহস দিতে পারে। এ কারণেই নার্সদের ‘দ্বিতীয় ঈশ্বর’ হিসেবেও দেখা হয়। নার্স হওয়া সহজ নয়। এর জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ, সহনশীলতা এবং মানুষের সাহায্য করার ইচ্ছা প্রয়োজন। এটি এমন একটি কাজ যা মানুষকে শুধু অন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসে না, বরং তাকে নিজের মধ্যে মানবতার আসল অর্থও শেখায়।
কেন নার্স দিবস পালিত হয়?
প্রতি বছর ৬ই মে জাতীয় নার্স দিবস পালিত হয় যাতে আমরা সেই নার্সদের ধন্যবাদ জানাতে পারি যারা প্রতিদিন রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন। এই বিশেষ দিনের উদ্দেশ্য হল নার্সদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং মানুষকে তাদের কাজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেওয়া। হাসপাতালগুলিতে নার্সরা দিন-রাত পরিশ্রম করে, পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন। তারা রোগীদের শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক যত্নও করে, তাই তাদের সম্মান করা আমাদের কর্তব্য।
এই দিবসের সূচনা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের স্মরণে করা হয়েছিল, যাকে "আধুনিক নার্সিংয়ের জননী" বলে মনে করা হয়। ১৮৫০-এর দশকে যখন যুদ্ধ চলছিল, তখন তিনি আহত সৈন্যদের সেবায় দিন-রাত এক করে দিয়েছিলেন। তাঁর কাজ প্রমাণ করেছে যে নার্সিং শুধুমাত্র একটি পেশা নয়, বরং একটি সেবা। সেই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে আজকের নার্সরাও মানবতার সच्चा উদাহরণ হয়ে রয়েছেন।
করোনা মহামারীতে নার্সদের অবদান
যখন পুরো বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীতে জর্জরিত ছিল, তখন নার্সরা সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে রোগীদের সেবা করেছেন। হাসপাতালে স্থান কম ছিল, ডাক্তারদের উপর চাপ ছিল, কিন্তু নার্সরা কখনো হতাশ হয়নি। তারা পিপিই কিট পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেছেন, সময়মতো খাবার খেতে পারেননি, বিশ্রাম নিতে পারেননি। তারপরেও তারা রোগীদের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।
নার্সরা এই কঠিন সময়ে প্রমাণ করেছেন যে তারা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর্মী নয়, বরং মানবতার প্রকৃত উদাহরণ। তারা শুধুমাত্র ওষুধ দেয় না, বরং রোগীদের মনে ভালোবাসা দিয়ে দেখাশোনা করে। মহামারীর সময় অনেক সময় রোগীরা একা থাকতেন, কিন্তু নার্সরা তাদের জন্য পরিবার হয়ে উঠতেন। এই ত্যাগ ও নিষ্ঠাকে কখনো ভুলতে পারা যাবে না। তাই আমাদের নার্সদের সম্মান করা এবং তাদের কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত, কারণ তারা আমাদের সবচেয়ে কঠিন সময়ে সাহায্য করেছেন।
নার্সদের ছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অসম্পূর্ণ
যেকোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নার্সদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তাররা চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু চিকিৎসা সঠিকভাবে প্রয়োগ করার কাজ নার্সদের। তারা শুধুমাত্র শারীরিক যত্ন করে না, বরং রোগীদের মানসিক ও মানসিক সহায়তাও দেয়। তাদের কাজ শুধু ওষুধ দেওয়া নয়, তারা রোগীদের ছোট-বড় প্রয়োজনের খেয়াল রাখে, যাতে রোগী স্বস্তি ও সাহস পায়।
নার্সিং পেশায় কর্মরত নারী ও পুরুষরা সর্বদা তাদের পেশাদার কর্তব্য পালন করে। তাদের কাজ ২৪ ঘণ্টা চলে, এবং এর জন্য তাদের কখনো ছুটি পাওয়া যায় না। দিন হোক বা রাত, প্রতিটি পরিস্থিতিতে নার্সরা তাদের কর্তব্য পালন করে। এই পেশা শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও কঠিন, কিন্তু নার্সরা সর্বদা তাদের কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকে।
নার্স দিবসে নার্সদের সেবাকে সম্মান করুন
নার্সদের পরিশ্রম ও নিষ্ঠাকে এই নার্স দিবসে প্রশংসা করা উচিত। নার্সরা হাসপাতালে দিন-রাত রোগীদের যত্ন নেয় এবং তাদের সেবায় কোনো কার্নি নেই। এই দিনে, আমরা তাদের ছোট ছোট উপায়ে ধন্যবাদ জানাতে পারি, যেমন একটি ‘ধন্যবাদ’ বলে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় #ThankYouNurses হ্যাশট্যাগ দিয়ে তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি।
তদুপরি, আমরা নার্সিং পেশার গুরুত্ব শিশু ও যুবকদের মধ্যে প্রচার করতে পারি। তাদের এই পেশার জন্য অনুপ্রাণিত করে আমরা নার্সিং ক্ষেত্রে আরও বেশি নিষ্ঠাবান মানুষ আনতে পারি। হাসপাতালে গিয়ে নার্সদের উৎসাহ বাড়ানোও একটি ভালো পদক্ষেপ হতে পারে, যাতে তাদের মনোবল আরও শক্তিশালী হয়। এই দিনটিকে বিশেষ করে তোলার জন্য নার্সদের জন্য ওয়েলনেস প্রোগ্রাম বা সম্মান অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা যেতে পারে।