হোলিকা দাহ ২০২৫: দেবী থেকে রাক্ষসী, পৌরাণিক কাহিনী ও গুরুত্ব

হোলিকা দাহ ২০২৫: দেবী থেকে রাক্ষসী, পৌরাণিক কাহিনী ও গুরুত্ব
সর্বশেষ আপডেট: 09-03-2025

হোলিকা: হিন্দু ধর্মে হোলিকা দাহকে অশুভের উপর শুভের বিজয়ের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু জানেন কি হোলিকা আদিতে একজন দেবী ছিলেন? প্রতি বছর ফাল্গুন পূর্ণিমার দিন হোলিকা দাহ করা হয়, কিন্তু এর পিছনে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। আসলে কেন একজন দেবীকে রাক্ষসী বলা হলো, এবং কিভাবে তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে ভস্ম হলেন? আসুন জেনে নেই এই পৌরাণিক কাহিনীটি বিস্তারিতভাবে।

কবে হোলিকা দাহ ২০২৫?

এই বছর হোলিকা দাহ ১৩ই মার্চ হবে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, পূর্ণিমা তিথি ১৩ই মার্চ সকাল ১০:৩৫ টায় শুরু হবে এবং ১৪ই মার্চ দুপুর ১২:২৩ টায় শেষ হবে। হোলিকা দাহের শুভ মুহূর্ত ১৩ই মার্চ রাত ১১:২৬ টা থেকে ১২:৩০ টা পর্যন্ত। অন্যদিকে, রঙের উৎসব হোলি ১৪ই মার্চ পালিত হবে।

হোলিকা: দেবী থেকে রাক্ষসী হয়ে ওঠার গল্প

প্রাচীন গ্রন্থ অনুসারে, হোলিকা মূলত একজন দেবী ছিলেন, কিন্তু একজন ঋষির অভিশাপের ফলে তাকে রাক্ষসী যোনি ধারণ করতে হয়েছিল। মনে করা হয় হোলিকা কোনো পূর্বজন্মে একজন দিব্য স্ত্রী ছিলেন, যিনি কোনো ঋষির অপমান করেছিলেন। এই অপরাধের ফলে ঋষি তাকে রাক্ষস কুলের জন্ম নেওয়ার অভিশাপ দিয়েছিলেন। এই কারণেই তাকে হিরণ্যকশিপুর বোন হিসেবে জন্ম নিতে হয়েছিল এবং তাকে রাক্ষসী বলা হতে লাগলো।

হিরণ্যকশিপু ও প্রহ্লাদের কথা

দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু ভগবান বিষ্ণুর কট্টর বিরোধী ছিলেন। তিনি তার রাজ্যে বিষ্ণুভক্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন, কিন্তু তার পুত্র প্রহ্লাদ বিষ্ণুর পরম ভক্ত ছিলেন। এই কথা হিরণ্যকশিপু সহ্য করতে পারেননি এবং তিনি প্রহ্লাদকে হত্যা করার অনেক চেষ্টা করেছিলেন।

হোলিকার বরদান ও ধ্বংস

হোলিকাকে বরদান পাওয়া গিয়েছিল যে অগ্নি তাকে পোড়াতে পারবে না। হিরণ্যকশিপু এই বরদান ব্যবহার করে প্রহ্লাদকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি তার বোনকে বলেছিলেন যে সে প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে অগ্নিদাহ করুক। কিন্তু বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের জন্য ভগবানের কৃপা ছিল, যার ফলে তিনি নিরাপদে ছিলেন এবং হোলিকা ভস্ম হয়ে গেলেন।

হোলিকা পূজার গুরুত্ব

যদিও হোলিকাকে রাক্ষসী বলা হয়, তবে তার পূজাও করা হয়। মনে করা হয় অগ্নিদাহের পর তিনি তার পূর্বজন্মের পাপ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এই কারণেই হোলিকা দাহের দিন তার পূজার প্রথা চলে আসছে।

হোলিকা দাহ শুধুমাত্র একটি প্রথা নয়, বরং এটি বার্তা দেয় যে অশুভ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, সত্য ও ভক্তির সামনে টিকে থাকতে পারে না। এই উৎসব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে অধর্মের অন্ত্য নিশ্চিত এবং সত্যের সর্বদা বিজয় হয়।

Leave a comment