হিন্দি সাংবাদিকতা দিবস: উদন্ত মার্তন্ডের উত্তরাধিকার ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ

হিন্দি সাংবাদিকতা দিবস: উদন্ত মার্তন্ডের উত্তরাধিকার ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ
সর্বশেষ আপডেট: 19-05-2025

ভারতের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চারটি প্রধান স্তম্ভের মধ্যে একটি হল মিডিয়া। এই মিডিয়ার শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং মাতৃভাষা হিন্দিতে এর ঐতিহাসিক সূচনার স্মরণে প্রতি বছর ৩০শে মে 'হিন্দি সাংবাদিকতা দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটি কেবলমাত্র একটি ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়, বরং হিন্দি সাংবাদিকতার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও গণতান্ত্রিক অবদানকেও উজ্জ্বল করে তোলে।

উদন্ত মার্তন্ডের সূচনায় হিন্দি সাংবাদিকতার ভিত্তি স্থাপন

এই দিনটির গুরুত্ব ১৮২৬ সালে ঘটা একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে জড়িত, যখন পণ্ডিত যুগল কিশোর শুক্ল ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতা থেকে প্রথম হিন্দি সংবাদপত্র উদন্ত মার্তন্ড (যার অর্থ 'উঠন্ত সূর্য') প্রকাশ করেন। সেই সময় দেশে ইংরেজি, ফারসি এবং বাংলা ভাষায় সংবাদ প্রচারের আধিপত্য ছিল এবং সাধারণ জনতা, বিশেষ করে হিন্দিভাষী সম্প্রদায়, সংবাদ থেকে বঞ্চিত ছিল।

উদন্ত মার্তন্ডের প্রথম সংখ্যা ৩০শে মে, ১৮২৬ সালে প্রকাশিত হয় এবং এখান থেকেই হিন্দি সাংবাদিকতার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। যদিও আর্থিক অসুবিধার কারণে এই প্রকাশনা কয়েক মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়, তবে এর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার পরবর্তী সময়ে হিন্দি মিডিয়ার জন্য পথ প্রশস্ত করে।

২০২৫ সালে কখন পালিত হবে হিন্দি সাংবাদিকতা দিবস

২০২৫ সালে হিন্দি সাংবাদিকতা দিবস গুরুবার, ৩০শে মে পালিত হবে। এই দিনটি কেবলমাত্র ইতিহাস স্মরণ করার দিন নয়, বরং বর্তমানে হিন্দি সাংবাদিকতার ভূমিকা ও দায়িত্বের পুনঃনিশ্চয় করার সুযোগ।

মিডিয়ার পরিবর্তিত রূপ এবং হিন্দি সাংবাদিকতার ভূমিকা

আজ সাংবাদিকতা কেবল মুদ্রিত শব্দে সীমাবদ্ধ নয়। প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তিত জগতে সংবাদ এখন ডিজিটাল মাধ্যম, টেলিভিশন চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এমন সময়ে হিন্দি সাংবাদিকতার পৌঁছ এবং প্রভাব ক্ষেত্র আরও ব্যাপক হয়েছে। হিন্দি সংবাদপত্র, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ এবং ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে এখন সেই পাঠকরাও যুক্ত হতে পারছেন যারা আগে তথ্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন। হিন্দি মিডিয়ার এই শক্তিই যে শহর থেকে গ্রামীণ ভারত পর্যন্ত কার্যকরভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে।

স্থানীয়তা এবং ভাষার শক্তি

হিন্দি সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় শক্তি হল এর স্থানীয়তা এবং জনভাষায় যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষমতা। যখন কোনও সংবাদ পাঠকের নিজের ভাষায় থাকে, তখন তা কেবল তথ্যই প্রদান করে না, বরং মানসিকভাবেও যুক্ত হয়। এ কারণেই দেশের দূরবর্তী অঞ্চলেও হিন্দি মিডিয়াকে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া যায়।

এছাড়াও হিন্দি সাংবাদিকতা আঞ্চলিক সমস্যা, স্থানীয় নেতৃত্ব, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে জাতীয় আলোচনার অংশ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

সাংবাদিকতা এবং গণতন্ত্র: প্রশ্ন করার প্রথা

কোনও সুস্থ গণতন্ত্রে মিডিয়ার ভূমিকা তত্ত্বাবধায়কের। যখন সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন প্রশ্ন করার দায়িত্ব সাংবাদিকদের। চাই সেটি দুর্নীতির ঘটনা হোক, জনহিতকর পরিকল্পনার অবস্থা হোক অথবা নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন—সাংবাদিকতা সেই আয়না যা সমাজকে তার সত্য দেখায়।

হিন্দি সাংবাদিকতা এই দায়িত্ব পালন করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই হিন্দি মিডিয়া সরকারকে কঠঘরায় দাঁড় করিয়েছে, সাধারণ জনগণের কণ্ঠস্বরকে মঞ্চ দিয়েছে এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে।

চ্যালেঞ্জ কম নয়

একদিকে হিন্দি সাংবাদিকতা বিশাল ক্ষেত্রে পরিধি বৃদ্ধি করেছে, অন্যদিকে বিশ্বাসযোগ্যতা, পীত সাংবাদিকতা, রাজনৈতিক চাপ এবং আর্থিক নির্ভরতা সহ অনেক গুরুতর সমস্যাও সামনে এসেছে। ডিজিটাল যুগে ভুয়া সংবাদ এবং যাচাই না করে ছড়িয়ে পড়া তথ্য নিয়ে লড়াই করা হিন্দি মিডিয়ার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, প্রেসের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষ প্রতিবেদন আজও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। অনেক সময় হিন্দি সাংবাদিকদের স্থানীয়ভাবে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবেদন করতে হয় যা তাদের জন্য প্রাণঘাতীও হতে পারে।

ইতিহাস থেকে ভবিষ্যতের দিকে

হিন্দি সাংবাদিকতা দিবস ২০২৫ কেবল একটি তারিখ নয়, বরং এটি একটি স্মরণোৎসব যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তথ্যের অধিকার গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড এবং সাংবাদিকতা তার চোখ। পণ্ডিত যুগল কিশোর শুক্ল কর্তৃক রোপিত এই বীজ আজ একটি বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে যার শাখা-প্রশাখা দেশের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ যখন হিন্দি সাংবাদিকতা ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তখন এই দিনটি আমাদের দায়িত্ব, সত্য ও নিরপেক্ষতার ভাবনা নিয়ে সাংবাদিকতা করার অনুপ্রেরণা দেয়। হিন্দি সাংবাদিকতা কেবল একটি ভাষার মাধ্যম নয়, বরং একটি অনুভূতি—একটি সেতু যা শাসক ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। এই দিবস সকল সাংবাদিকদের উৎসর্গিত, যারা অবিরাম, অনমনীয়, অক্লান্ত—সত্যের মশাল ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন।

Leave a comment