চম্পক বনের সম্পন্ন মেলা: কোকিল ও কাকের শিক্ষা

চম্পক বনের সম্পন্ন মেলা: কোকিল ও কাকের শিক্ষা
সর্বশেষ আপডেট: 28-12-2024

চম্পক বনের ঘন জঙ্গলে প্রতি বছর 'সম্পন্ন মেলা' খুব ধুমধাম করে পালিত হয়। এই মেলা পশু-পাখিদের মেলামেশা, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং একতাকে বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আয়োজিত করা হয়। মেলা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং জঙ্গলের সকল জীব একে অপরের সাথে ভালোভাবে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করে।

এই মেলার সময় সিংহরাজ ঘোষণা করেন যে, কোনো জীব অন্য কোনো জীবের উপর হামলা করবে না এবং সবাই নিজের পছন্দের খাবার উপভোগ করবে। সকল প্রাণী তাদের নিজ নিজ স্থান থেকে মহারাজকে উপহার দিয়ে নিজেদের একতা ও ভালোবাসার বার্তা দেয়। মেলার সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো মহারাজের পক্ষ থেকে দেওয়া ভোজ, যেখানে প্রতিটি প্রাণীর পছন্দের খাবার বিশেষভাবে পরিবেশন করা হয়।

কোকিলের সুর এবং গর্ব

এবারের মেলায়, মনোরঞ্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যখন কোকিল রানীর নাম ঘোষণা করা হলো, তখন সে গর্বের সাথে মঞ্চে এসে দাঁড়ালো। নিজের মিষ্টি সুরে গান গেয়ে সে সকলের মন জয় করে নিল। জঙ্গল তখন হাততালির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু, এরই মধ্যে কোকিল মহিলা কাককে ব্যঙ্গ করে বললো, "এবার আপনারা মহিলা কাকের গান শুনুন, হয়তো আপনাদের স্বাদ বদল হতে পারে।" এই কথা শুনে সবাই হেসে উঠল, কিন্তু মহিলা কাকের মনে গভীর আঘাত লাগল।

মহিলা কাকের জবাব

অপমান সহ্য করা মহিলা কাকের জন্য কঠিন ছিল। সে মঞ্চে এসে বলল, "কোকিল, তোমার গানে সুর আছে, কিন্তু তোমার কথায় অহংকার এবং তিক্ততা মিশে আছে। তুমি কি ভুলে গেছ যে, নিজেদের ডিম রক্ষা করার জন্য আমাদেরই সাহায্য নিতে হয়?"

মহিলা কাক কোকিলের আসল রূপ সকলের সামনে তুলে ধরল। সে জানালো যে, কোকিল কাকের বাসায় ডিম পাড়ে, যাতে কাকেরা তাদের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোঁটাতে পারে। মহিলা কাকের আত্মত্যাগ দেখে কোকিল স্তম্ভিত হয়ে গেল।

কোকিলের অনুশোচনা

মহিলা কাকের কথা শুনে কোকিল নিজের ভুল বুঝতে পারলো। সে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে বলল, "আমি আমার সুর ও গানের গর্বে তোমার ত্যাগ ও মহত্ত্বকে অস্বীকার করেছি। তোমার পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের মূল্য আমি বুঝিনি। আমাকে ক্ষমা করো।"

মহারাজ সিংহ এই পরিস্থিতিতে বললেন, "এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে, অহংকার ও অন্যের অপমান আমাদের দুর্বল করে তোলে। আমাদের প্রতিটি জীবের অবদানকে সম্মান করতে হবে এবং একতার গুরুত্ব স্বীকার করতে হবে।"

মেলার বার্তা

এই মেলা শুধু বিনোদন আর উৎসবের আনন্দ দেয়নি, বরং একটি গভীর শিক্ষাও দিয়েছে। এটি শিখিয়েছে যে প্রতিটি জীবের নিজস্ব ভূমিকা এবং গুরুত্ব আছে। কোকিল ও মহিলা কাকের মধ্যেকার কথোপকথন এই কথার প্রতীক যে, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্মানের মাধ্যমেই প্রকৃত একতা গড়ে ওঠে।

চম্পক বনের মেলা শুধু একটি আয়োজন নয়, বরং জীবনের মূল্যবান নীতিগুলি উপলব্ধি ও ভাগ করে নেওয়ার একটি সুযোগ। এটি আমাদের শেখায় যে, সম্মান, ত্যাগ এবং একতা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ।

```

Leave a comment