ভাঙাচোরা সাইকেলে দশ হাজার কিলোমিটার! স্বপ্নপূরণে দুঃসাহসী অভিযানে পিকলু

ভাঙাচোরা সাইকেলে দশ হাজার কিলোমিটার! স্বপ্নপূরণে দুঃসাহসী অভিযানে পিকলু
সর্বশেষ আপডেট: 22-02-2025

হুগলির ত্রিবেণীর এক সাধারণ যুবক, সুভাশিষ ঘোষ ওরফে পিকলু। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল অসাধারণ! মা চেয়েছিলেন তিনি যেন সাইকেলে কেদারনাথ দর্শন করেন। ছেলের মনে কথা লেগে গেল, আর সেই স্বপ্নপূরণেই বেরিয়ে পড়লেন তিনি। তবে শুধু কেদারনাথ নয়, দেশের দশটি রাজ্য পাড়ি দিয়ে অবশেষে ফিরে এলেন বাড়ি। এই দীর্ঘ পথে তিনি সংগ্রহ করেছেন অসংখ্য অভিজ্ঞতা, জয় করেছেন প্রতিকূলতাকে।

যাত্রাপথ: ১০ মাসে ১০ রাজ্য!

পিকলুর সফর শুরু হয়েছিল ত্রিবেণী থেকে। প্রথমে পৌঁছলেন কলকাতায়, তারপর শিলিগুড়ি হয়ে ঢুকে পড়লেন নেপালে। পশুপতি মন্দির দর্শন করে ফের ছুটলেন ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থানে।

  • উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা রাম মন্দির
  • উত্তরাখণ্ডের কেদার-বদ্রিনাথ, গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রী
  • হিমাচল প্রদেশের সিমলা, কুলু-মানালি
  • পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি, গুরগাঁও, নয়ডা
  • রাজস্থানের বিস্তীর্ণ মরুভূমি পেরিয়ে মধ্যপ্রদেশ
  • শেষপর্যন্ত বিহার-ঝাড়খণ্ড হয়ে ত্রিবেণীতে ফেরা

এ যেন শুধু ভ্রমণ নয়, এক দুঃসাহসী অভিযানের নাম!

প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ! বিপদের মুখেও থামেননি

এই ১০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সফরে পিকলুকে নানান বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কোথাও প্রবল ঠান্ডা, কোথাও প্রচণ্ড গরম। কখনও উঁচু পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠতে হয়েছে, আবার কখনও ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সাইকেল চালাতে হয়েছে।

সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা?
পিকলু বলেন, "কয়েকটি জায়গায় জঙ্গলের মধ্যে রাত কাটাতে হয়েছিল। একবার তো সামনেই বাঘের ছায়া দেখতে পাই! দ্রুত টিন বাজিয়ে, আওয়াজ করে বাঁচতে হয়েছিল!"

শুধু বাঘ নয়, শারীরিক ধকলও কম ছিল না। পথে মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়েছেন। খাবার-পানীয়র অভাব, বিশ্রামের জায়গার সংকট—সবকিছুর সঙ্গেই লড়তে হয়েছে তাঁকে। তবু একবারও থামেননি, লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট!

পরিবেশের বার্তা: ‘গাছ বাঁচান, জীবন বাঁচান’

এই সফর শুধু তীর্থযাত্রা ছিল না, পিকলুর লক্ষ্য ছিল পরিবেশ সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। পথে পথে প্রচার করেছেন ‘গাছ বাঁচান, জীবন বাঁচান’ বার্তা। বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন, শিশুদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন প্রকৃতির গুরুত্ব।

নায়ক হয়ে ফিরলেন ত্রিবেণীতে!

দশ মাস পর যখন ত্রিবেণীতে ফিরলেন, তখন তাঁকে বরণ করে নিল এলাকাবাসী। ফুল-মালা, হাততালি, আনন্দ-উচ্ছ্বাস—সব মিলিয়ে যেন এক নায়ককে সংবর্ধনা দেওয়া হল! পিকলু এখন এলাকার ‘সাইকেল সুপারস্টার’

এরপর? নতুন স্বপ্ন, নতুন লক্ষ্য!

এই বিশাল যাত্রার পরেও পিকলুর স্বপ্নের শেষ নেই। কিছুদিন বিশ্রামের পর আবার নতুন অভিযানের পরিকল্পনা করছেন তিনি। এবার লক্ষ্য আরও বড়, আরও দূর! তিনি বলেন, "জীবন একটাই, যদি কিছু করা যায়, তাহলে বড় কিছুর জন্য চেষ্টা করাই ভালো!"

ত্রিবেণীর এই যুবকের গল্প প্রমাণ করে দেয়, সংকল্প আর অধ্যবসায় থাকলে অসম্ভব কিছুই নয়!

Leave a comment