প্রতি বছর ৪ঠা মে ইন্টারন্যাশনাল ফায়ারফাইটার্স ডে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অগ্নি নির্বাপক দিবস পালিত হয়। এই দিনটি সেসব বীর অগ্নি নির্বাপকদের উৎসর্গ করা হয় যারা আমাদের সুরক্ষার জন্য নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে মানুষকে রক্ষা করা, দুর্ঘটনায় আটকে পড়া মানুষদের প্রাণ বাঁচানো এবং কঠিন পরিস্থিতিতে সেবা প্রদান করা—এই কাজ শুধুমাত্র একজন প্রকৃত বীরই করতে পারেন। এই বিশেষ দিনে আমরা তাদের সাহস, নিষ্ঠা এবং কর্তব্যপরায়ণতাকে সালাম জানাই।
ফায়ারফাইটার্স ডে কেন পালিত হয়?
ইন্টারন্যাশনাল ফায়ারফাইটার্স ডে প্রতি বছর ৪ঠা মে পালিত হয়। এর সূচনা ১৯৯৯ সালে হয়, যখন অস্ট্রেলিয়ায় আগুন নেভানোর সময় পাঁচজন অগ্নি নির্বাপকের দুঃখজনক মৃত্যু হয়। এই ঘটনা পুরো বিশ্বকে শোকাহত করে এবং এটা উপলব্ধি করিয়ে দেয় যে, যারা আমাদের প্রাণ বাঁচায়, তাদের জন্যও একটি বিশেষ দিন থাকা উচিত। এই কারণেই ৪ঠা মে, সেই সাহসী অগ্নি নির্বাপকদের সম্মান জানানোর জন্য নির্বাচিত হয় যারা অন্যদের সুরক্ষার জন্য নিজেদের প্রাণ ঝুঁকিতে ফেলে।
৪ঠা মে সেন্ট ফ্লোরিয়ান ডেও পালিত হয়, যিনি অগ্নি নির্বাপকদের অভিভাবক সন্ত বলে বিবেচিত। তাই এই দিনটি অগ্নি নির্বাপকদের সম্মানের জন্য আরও বিশেষ হয়ে ওঠে। এই দিনে আমরা সেসব অগ্নি নির্বাপকদের স্মরণ করি যারা নিজেদের কর্তব্য পালনের সময় শহীদ হয়েছেন এবং পাশাপাশি, সেসব মানুষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যারা আজও আমাদের সুরক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছেন।
অগ্নি নির্বাপকদের জীবন কতটা কঠিন?
অগ্নি নির্বাপকদের জীবন অত্যন্ত কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। যখন কোথাও আগুন লাগে অথবা কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটে, তখন সবার আগে এসব লোকই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। যেখানে সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যায়, সেখানে অগ্নি নির্বাপকরা ভয় ছাড়া আগুনের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাদের কাজ শুধুমাত্র আগুন নেভানো নয়, বরং আগুনে আটকে পড়া মানুষদের নিরাপদে বের করে আনা, পশুপাখির প্রাণ বাঁচানো এবং আহতদের সাহায্য করাও অন্তর্ভুক্ত।
তাদের সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হয়—চাই দিন হোক বা রাত, গরম হোক বা বৃষ্টি। কখনও কখনও ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করতে হয়, বিশ্রাম ছাড়া। তাদের কাছে ভারী সুরক্ষা সরঞ্জাম থাকে, যা পরে কাজ করা সহজ নয়, কিন্তু তারপরও তারা পুরো দায়িত্বশীলতার সাথে নিজেদের কাজ করে।
শারীরিক শক্তির সাথে সাথে মানসিকভাবেও তাদের অত্যন্ত দৃঢ় থাকতে হয়, কারণ অনেক সময় তাদের খুবই দুঃখজনক এবং ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এর পরও তারা পিছনে হঠেন না। প্রতিটি মিশনে তাদের প্রাণের ঝুঁকি থাকে, কিন্তু অন্যদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তারা নিজেদের প্রাণের প্রতি কোনো তোয়াক্কা করেন না।
যদি অগ্নি নির্বাপকরা না থাকত, তাহলে আমাদের সুরক্ষা কেমন হতো?
কোনো ভবনে হঠাৎ আগুন লেগে গেলে, কোনো গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটলে, কোথাও গ্যাস লিকের ঘটনা ঘটলে অথবা বন্যায় লোকজন আটকে পড়লে—এই রকম কঠিন সময়ে সবার আগে যাদের প্রয়োজন হয়, তারা হলেন অগ্নি নির্বাপকরা। যদি তারা না থাকত, তাহলে অনেক সময় আমরা নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের রক্ষা করতে পারতাম না।
অগ্নি নির্বাপকরা শুধুমাত্র আগুন নেভানোর কাজ করে না, তারা মানুষের প্রাণ বাঁচায়। তারা উঁচু ভবনে উঠে, জ্বলন্ত স্থানে ভয় ছাড়া ঢুকে পড়ে এবং আটকে পড়া মানুষদের বের করে আনে। তাদের বীরত্ব এবং তৎপরতার অভাবে আমাদের সুরক্ষা অসম্পূর্ণ।
যদি অগ্নি নির্বাপকরা না থাকত, তাহলে স্কুল, হাসপাতাল, কারখানা অথবা বাড়ি—যেখানেই হোক, একটু ছোট আগুনও বড় ধ্বংসযজ্ঞের রূপ নিতে পারত। অনেক সময় এক মিনিটের বিলম্বও অনেক ক্ষতি করে। তাই অগ্নি নির্বাপকদের থাকা আমাদের জীবনের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ভারতে অগ্নি নির্বাপকদের ভূমিকা
ভারতের মতো বৃহৎ এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশে অগ্নি নির্বাপকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও আগুন লাগা, গ্যাস লিক হওয়া অথবা ভবন ধ্বসের মতো ঘটনা ঘটে। এমন সময় অগ্নি নির্বাপকরাই সবার আগে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মানুষের প্রাণ বাঁচায়। চাই শহর হোক বা গ্রাম, সর্বত্রই ফায়ার ব্রিগেডের দল ২৪ ঘন্টা প্রস্তুত থাকে।
ভারতে অনেক সময় সংস্থানের অভাব থাকে, যেমন—পুরোনো গাড়ি, কম কর্মী অথবা অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব। এর পরও আমাদের অগ্নি নির্বাপকরা হাল ছাড়েন না। তারা অবিরাম, অক্লান্তভাবে নিজেদের প্রাণ ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের প্রাণ বাঁচায়। বড় ভবনে আগুন লাগা থেকে শুরু করে গাড়ির দুর্ঘটনা অথবা বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের সাহায্য করা পর্যন্ত, প্রতিটি চ্যালেঞ্জে তারা সবার আগে থাকে।
আজ ভারতের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই ফায়ার স্টেশন আছে, কিন্তু এখনও অনেক এলাকায় ফায়ার সার্ভিসকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন আছে। আমাদের এই সাহসী মানুষদের কাজের প্রশংসা করা উচিত এবং তাদের সুরক্ষার জন্য উন্নত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি জানানো উচিত।
এই দিনে আমরা কি করতে পারি?
৪ঠা মে পালিত ইন্টারন্যাশনাল ফায়ারফাইটার্স ডে শুধুমাত্র একটা দিন নয়, বরং সেই সাহসী অগ্নি নির্বাপকদের ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ যারা প্রতিদিন আমাদের প্রাণের রক্ষা করে। এই বিশেষ দিনে আমরা কিছু ছোট কিন্তু কার্যকর কাজ করতে পারি।
আপনি আপনার নিকটস্থ ফায়ার স্টেশনে গিয়ে সেখানকার অগ্নি নির্বাপকদের ধন্যবাদ জানাতে পারেন। তাদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আপনি তাদের কাজের গুরুত্ব আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। শিশুদেরও তাদের সম্পর্কে জ্ঞান দিন যাতে তারা শৈশব থেকেই এই প্রকৃত বীরদের সম্মান করা শিখতে পারে।
যদি আপনি সেখানে যেতে না পারেন, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় #InternationalFirefightersDay ব্যবহার করে একটি বার্তা শেয়ার করুন এবং অন্যদেরকেও সচেতন করুন। কিছু লোক এই দিনে নীল এবং লাল রিবন পরেন, যা আগুন এবং পানির প্রতীক—আপনিও তা করতে পারেন।