মাতঙ্গী জয়ন্তী প্রতি বছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন পালিত হয়, যা এবার ৩০শে এপ্রিল। এই দিনে মা মাতঙ্গীকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিশেষ মন্ত্রের জপ করা শুভ বলে মনে করা হয়। এই মন্ত্রের মাধ্যমে জীবনে সিদ্ধি ও সাফল্য লাভ করা যায়। অক্ষয় তৃতীয়া একটি পবিত্র উৎসব যা হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত শুভ ও ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়। একে আখা তীজও বলা হয়। প্রতি বছর এই উৎসব বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয়ার তিথিতে পালিত হয়। এই দিনের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
এই বছর অক্ষয় তৃতীয়া ৩০শে এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে কোনও পঞ্জিকা দেখা ছাড়াই আপনি যেকোনও শুভ কাজ করতে পারেন। বিবাহ, গৃহ প্রবেশ, সোনা-রূপার কেনাকাটা, নতুন ব্যবসা শুরু করা বা নতুন যানবাহন কেনা—এগুলির জন্য এই দিন অত্যন্ত লাভজনক।
পূজা ও সোনা কেনার শুভ সময় কী?
অক্ষয় তৃতীয়া একটি অত্যন্ত শুভ দিন বলে মনে করা হয়। এই দিনে নির্দিষ্ট সময়ে পূজা ও কেনাকাটা করলে জীবনে কখনো শেষ না হওয়া পুণ্য ও সুখ-সমৃদ্ধি লাভ হয়।
এই বছর অক্ষয় তৃতীয়া ৩০শে এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার। এই দিনে:
- মা লক্ষ্মী ও ভগবান বিষ্ণুর পূজার শুভ সময় হল — সকাল ৫:৪০ টা থেকে দুপুর ১২:১৮ টা পর্যন্ত। এই সময় পূজা করলে ধন, শান্তি ও সুখ লাভ হয়।
- সোনা বা রূপা কেনার সর্বোত্তম সময় হল — সকাল ৫:৪১ টা থেকে দুপুর ২:১২ টা পর্যন্ত। এই সময় কেনা জিনিসগুলি দীর্ঘদিন লাভ দেয়।
মা লক্ষ্মীকে দিন এই বিশেষ ভোগ, পাবেন ধন ও সুখ
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মা লক্ষ্মীকে প্রিয় খাবারের ভোগ দেওয়া অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এমন বিশ্বাস রয়েছে যে এই দিনে বিশেষ খাবারের ভোগ দেওয়ার ফলে বাড়িতে মা লক্ষ্মীর কৃপা বজায় থাকে এবং সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। আপনি এই দিনে ভোগে এই জিনিসগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন:
- সত্তু – এটি ছোলা বা যবের তৈরি হতে পারে, যা শীতলতা ও তাজাভাব দেয়।
- খির – চাল বা সেঁইয়ে তৈরি খির মা লক্ষ্মীকে অত্যন্ত প্রিয় বলে মনে করা হয়।
- হালুয়া – সুজি বা আটার তৈরি হালুয়া বিশেষ করে পূজায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
- চনার ডাল – এটি শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক বলে মনে করা হয়।
- ঋতুকালীন ফল – যেমন আম, কলা, আপেল ইত্যাদি।
- মিষ্টি – বেসন লাড্ডু, বরফি বা যেকোনো ঘরে তৈরি মিষ্টি।
পূজা বিধি—কীভাবে মা লক্ষ্মী ও ভগবান বিষ্ণুর পূজা করবেন
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয় এবং এই দিনে মা লক্ষ্মীর পূজা করলে বাড়িতে কখনোই ধন ও অন্ন এর অভাব হয় না। এই বিশেষ দিনে আপনি ঘরে বসেই খুব সহজেই পূজা করতে পারেন। এর জন্য কোনও পণ্ডিতের প্রয়োজন হয় না। নীচে দেওয়া সহজ পদ্ধতিটি অনুসরণ করে আপনি পূজা করতে পারেন।
প্রথমে সকালে তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরুন, বিশেষ করে লাল বা হলুদ রঙের পোশাক পরা শুভ বলে মনে করা হয়। তারপর ঘরের মন্দির বা পূজার স্থানটি ভালো করে পরিষ্কার করুন। পূজার স্থানে লাল বা হলুদ রঙের কাপড় বিছিয়ে সেখানে ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন।
এবার গঙ্গাজল, রোলী, চন্দন, অক্ষতা (চাল), ফুল, ধূপ ও দীপ দিয়ে দেবদেবীর পূজা করুন। এরপর মা লক্ষ্মীকে সত্তু বা খিরের ভোগ দিন। পূজার সময় বিষ্ণুসহস্রনাম পাঠ করুন অথবা নীচে দেওয়া মন্ত্রগুলির জপ করুন:
ॐ শ্রীং হ্রীং শ্রীং মহালক্ষ্ম্যৈ নমঃ ॐ সর্বাবাধা বিনিরমুক্তো, ধন ধান্যঃ সুতান্বিতঃ। মনুষ্যো মৎপ্রসাদেন ভবিষ্যতি না সংশয়ঃ ॐ ॥
শেষে আরতি করুন এবং সকল পরিজনকে প্রসাদ বিতরণ করুন। এভাবে শ্রদ্ধা ও নিয়মিতভাবে করা পূজার ফলে মা লক্ষ্মী সন্তুষ্ট হন এবং আপনার বাড়িতে সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে।
মা লক্ষ্মীকে সন্তুষ্ট করার জন্য করুন এই মন্ত্রগুলির জপ
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মা লক্ষ্মী ও ভগবান বিষ্ণুর পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যদি আপনি এই দিনে পূজা করছেন, তাহলে নীচে দেওয়া মন্ত্রগুলির জপ অবশ্যই করুন। এই মন্ত্রগুলি অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয় এবং এগুলি দ্বারা দেবী লক্ষ্মী দ্রুত সন্তুষ্ট হন। এই মন্ত্রগুলির অন্তত ১১ বার জপ করুন:
- ॐ শ্রীং হ্রীং শ্রীং কমলে কমলালয়ে প্রসীদ প্রসীদ
ॐ শ্রীং হ্রীং শ্রীং মহালক্ষ্ম্যৈ নমঃ॥ - ॐ শ্রী মহালক্ষ্ম্যৈ চ বিদমহে
বিষ্ণু পত্ন্যৈ চ ধীমহি
তন্নো লক্ষ্মী প্রচোদয়াত্ ॐ॥ - ॐ সর্বাবাধা বিনিরমুক্তো
ধন ধান্যঃ সুতান্বিতঃ।
মনুষ্যো মৎপ্রসাদেন
ভবিষ্যতি না সংশয়ঃ ॐ॥
অক্ষয় তৃতীয়া কেন বিশেষ?
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত শুভ ও বিশেষ বলে মনে করা হয়। এই দিনের সাথে যুক্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে যা একে বিশেষ করে তোলে:
- ভগবান পরশুরামের জন্ম — এই দিনে ভগবান পরশুরামের জন্ম হয়েছিল, যিনি বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করা হয়।
- পাণ্ডবদের অক্ষয় পাত্র লাভ — এই দিনেই পাণ্ডবরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে অক্ষয় পাত্র পেয়েছিলেন, যার ফলে তাদের অবিরাম খাদ্য লাভ হতো।
- ভগবান বিষ্ণুর নর-নারায়ণ অবতার — এই দিনে ভগবান বিষ্ণু নর-নারায়ণ রূপে অবতার গ্রহণ করেছিলেন।
- কুবেরকে ধনের অধিপতি করা হয়েছিল — এই দিনেই ভগবান শিব কুবেরকে সমৃদ্ধি ও ধনের অধিপতি নিযুক্ত করেছিলেন।
- ত্রেতাযুগের আরম্ভ — অক্ষয় তৃতীয়া থেকে ত্রেতাযুগের আরম্ভ বলে মনে করা হয়, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ যুগ।
অক্ষয় তৃতীয়া ২০২৫: এই দিনে কী করবেন এবং কী করবেন না
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বিশেষ করে শুভ ও ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়। এই দিনে কিছু কাজ করলে বিশেষ লাভ হয়, আবার কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই দিনে কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়:
করা উচিত:
- মা লক্ষ্মী ও ভগবান বিষ্ণুর পূজা করুন – এই দিনে এই দেবদেবীর পূজা করলে ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি আসে।
- সোনা, রূপা বা হলুদ জিনিসপত্র কিনুন – এই দিনে সোনা বা রূপা কেনার ফলে ঘরে লক্ষ্মীর বাস হয়।
- দরিদ্রদের দান করুন – অন্ন, বস্ত্র, জল ও ধনের দান করলে পুণ্য লাভ হয় এবং জীবনে সুখ-শান্তি বজায় থাকে।
- তুলসীতে জল দিন – তুলসীতে জল অর্পণ করলে ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভ হয়।
করা উচিত নয়
- মাংসাহার ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন – এই দিনে মাংসাহার ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকা উচিত যাতে পুণ্য লাভ হয়।
- পূজায় অবহেলা করবেন না – পূজা মনোযোগ ও শ্রদ্ধার সাথে করতে হবে, কোনও অবহেলা করা উচিত নয়।
- মন্দ চিন্তা ও ক্রোধ থেকে বিরত থাকুন – এই দিনে ইতিবাচক চিন্তা ও শান্তি বজায় রাখুন, ক্রোধ থেকে দূরে থাকুন।
- অপশব্দ ও নেতিবাচক কথা বলবেন না – কথার বিশেষ খেয়াল রাখুন এবং নেতিবাচক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকুন।
অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা কেন কিনবেন?
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সোনা কেনা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিনে সোনা কেনার ফলে এটা বিশ্বাস করা হয় যে এটি কখনো শেষ হয় না এবং ঘরে সর্বদা সমৃদ্ধি ও সুখ থাকে। সোনা ধন ও লক্ষ্মীর প্রতীক, তাই এই দিনে সোনার কেনাকাটা করলে বিশেষ লাভ হয়। এই দিন ধনের বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত শুভ।
অক্ষয় তৃতীয়া ২০২৫ শুধু পূজার দিন নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক বিনিয়োগের সুযোগ। এই দিনে করা শুভ কাজ, দান ও পূজা জীবনে সর্বদা অক্ষয় ফল দেয়।