চীন, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), কাতার, সিরিয়া এবং উত্তর কোরিয়া—এই ছয়টি দেশে WhatsApp নিষিদ্ধ বা সীমিত, যার মূল কারণ হলো সুরক্ষা, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলির স্বার্থ।
আজকের ডিজিটাল যুগে WhatsApp এমন একটি নাম যা প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর জীবনের অংশ। Meta-এর মালিকানাধীন এই অ্যাপটি শুধুমাত্র মেসেজিংয়ের জন্য নয়, বরং ভয়েস কল, ভিডিও কল, ফাইল শেয়ারিং, ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং এমনকি পেমেন্টের জন্যও ব্যবহৃত হয়। বিশ্বজুড়ে এর ২.৭ বিলিয়ন এর বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে এবং কেবল ভারতেই ৫৩.৫ কোটির বেশি লোক WhatsApp ব্যবহার করে।
WhatsApp নিষিদ্ধ করার প্রকৃত কারণ কী?
প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ থাকে। কিন্তু সাধারণত যেসব দেশে WhatsApp নিষিদ্ধ বা সীমিত, সেখানে এর পিছনে তিনটি মূল কারণ রয়েছে:
- রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: সরকার চায় মানুষের আলাপ-আলোচনার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকুক।
- সুরক্ষা কারণ: WhatsApp এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন প্রদান করে, যার ফলে সরকার তদারকি করতে পারে না।
- স্থানীয় টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলির স্বার্থ: অনেক দেশে WhatsApp কলিংয়ের ফলে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষতি হয়, তাই সেখানে কলিং ফিচার নিষিদ্ধ করা হয়।
১. চীন – সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
চীনে WhatsApp সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এখানকার সরকার একটি শক্তিশালী ইন্টারনেট সেন্সরশিপ সিস্টেম তৈরি করেছে যাকে “গ্রেট ফায়ারওয়াল” বলা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো বিদেশী প্ল্যাটফর্মগুলি ব্লক করা এবং চীনা ব্যবহারকারীদের WeChat-এর মতো স্থানীয় অ্যাপের দিকে ঠেলে দেওয়া। এর মাধ্যমে সরকার ব্যবহারকারীদের নজরদারিও করতে পারে।
২. ইরান – সময়-সময় নিষিদ্ধ
ইরানে WhatsApp সবসময় নয়, তবে রাজনৈতিক উত্তেজনার সময় আংশিক বা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়। সরকার এখানেও নাগরিকদের অনলাইন আলাপ-আলোচনার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায়। WhatsApp-এর মতো প্ল্যাটফর্মে এনক্রিপশনের কারণে এটি সম্ভব নয়, তাই এটি নিষিদ্ধ করা হয়।
৩. সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) – কলিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
UAE-তে WhatsApp-এর মাধ্যমে টেক্সট মেসেজ পাঠানো সম্ভব, কিন্তু ভয়েস এবং ভিডিও কলিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর মূল কারণ হলো দেশীয় টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষতি। সরকার চায় মানুষ স্থানীয় কলিং পরিষেবা ব্যবহার করুক যাতে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলির আয় বজায় থাকে।
৪. কাতার – কলিং ফিচার সীমিত
কাতারে WhatsApp ব্যবহার করে মেসেজ পাঠানো যায়, কিন্তু ভয়েস এবং ভিডিও কল করার সুবিধা এখানে বন্ধ। এর কারণ হলো সরকার স্থানীয় টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলির আয় রক্ষা করতে চায়। তাই কলিং ফিচার ব্লক করা হয়েছে, যাতে মানুষ স্থানীয় পরিষেবা বেশি ব্যবহার করে।
৫. সিরিয়া – সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
সিরিয়ায় সরকার ইন্টারনেটের উপর খুব কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং সেখানে WhatsApp সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষ যেন সহজে বাইরের দুনিয়ার খবর না পায়। তাই সরকার এমন প্ল্যাটফর্মকে অনুমতি দেয় না যা খোলাখুলি আলাপ-আলোচনা এবং তথ্য প্রেরণের সুযোগ দেয়।
৬. উত্তর কোরিয়া – ইন্টারনেটই বন্ধ
উত্তর কোরিয়া সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বন্ধ এবং নিয়ন্ত্রিত দেশ। এখানে সাধারণ নাগরিকদের গ্লোবাল ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস নেই। কেবলমাত্র কিছু সরকারি কর্মকর্তা সীমিত ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে WhatsApp-এর মতো অ্যাপের নাম উল্লেখ করাও বৃথা – এগুলি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
VPN-এর মাধ্যমে মানুষ কীভাবে ব্যবহার করে?
VPN অর্থাৎ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক এমন একটি টুল যা আপনার ইন্টারনেট সংযোগকে অন্য কোনো দেশের সার্ভারের সাথে সংযুক্ত করে। এতে আপনার অবস্থান পরিবর্তিত হয় এবং মনে হয় আপনি এমন কোনো দেশ থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন যেখানে WhatsApp নিষিদ্ধ নয়। এইভাবে অনেক ব্যবহারকারী সেইসব দেশেও WhatsApp ব্যবহার করতে পারে যেখানে এটি নিষিদ্ধ। তবে এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিরাপদ বা স্থায়ী নয়, কারণ অনেক দেশে VPN ব্যবহার করা অবৈধ বা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কিছু জায়গায় যদি সরকার জানতে পারে যে আপনি VPN ব্যবহার করেছেন, তাহলে জরিমানা বা শাস্তিও হতে পারে।