৯০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে ভারতের স্যাটেলাইট যোগাযোগের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতের মহাকাশ প্রযুক্তি ও স্যাটেলাইট যোগাযোগ (Satcom) ক্ষেত্রে এক বিরাট পদক্ষেপ গ্রহণ করে কেন্দ্র সরকার স্যাটেলাইট পরিষেবা চালু করার পূর্বে একটি শক্তিশালী ও কঠোর নীতি প্রণয়ন করেছে। এই নীতির ফোকাস কেবল প্রযুক্তিতে নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব ও সুরক্ষাতেও রয়েছে। আগামী দিনগুলিতে ভারতে অনেক বিদেশী কোম্পানি স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু করতে চলেছে, এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকার ৯০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করে একটি পর্যবেক্ষণ সুবিধা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হবে দেশের সীমানার মধ্যে কার্যরত প্রতিটি স্যাটেলাইটের উপর নজর রাখা।

ভারতে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের নতুন যুগ

ভারতে ইন্টারনেট সংযোগকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। স্থলজ নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে এখন আকাশ থেকে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনার উপর কাজ হচ্ছে। এর অধীনে লো-আর্থ অরবিট (LEO) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদান করা হবে। এই দিকে এলন মাস্কের Starlink, অ্যামাজনের Kuiper, এবং OneWeb-এর মতো বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলো সক্রিয় রয়েছে। OneWeb-এ ভারতীয় কোম্পানি Airtel-এরও অংশীদারিত্ব রয়েছে, যা এই প্রকল্পকে ভারতের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

যদিও, এই দ্রুত বর্ধমান প্রযুক্তির সাথে সাথে সুরক্ষা সংক্রান্ত উদ্বেগও বেড়েছে। বিদেশী কোম্পানিগুলির দ্বারা পরিচালিত স্যাটেলাইটগুলি যদি ভারতের সীমানার মধ্যে ইন্টারনেট বা ডেটা পরিষেবা সরবরাহ করে, তাহলে সরকারের তাদের উপর নজরদারি করা জরুরি হয়ে পড়ে।

৯০০ কোটি টাকায় হাইটেক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র

সরকার এখন এই নজরদারিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার দিকে এগিয়েছে। একটি প্রতিবেদনের অনুসারে, সরকার ৯৩০ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে একটি আধুনিক পর্যবেক্ষণ সুবিধা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সুবিধার মাধ্যমে দেশের ভেতরে কার্যরত সকল ঘরোয়া ও বিদেশী স্যাটেলাইটের রিয়েল টাইম পর্যবেক্ষণ করা হবে।

এই সিস্টেম কেবলমাত্র ডেটা যোগাযোগের ট্র্যাকিং করবে না, বরং আন্তর্জাতিক স্তরে যেকোনো স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক থেকে হওয়া কার্যকলাপের উপরও নজর রাখবে। এছাড়াও এই সুবিধা স্যাটেলাইট অপারেটরদের মধ্যে উন্নত সমন্বয় (coordination) নিশ্চিত করবে, যাতে কোনও নেটওয়ার্ক ওভারল্যাপিং বা হস্তক্ষেপ না হয়।

দূরসংযোগ বিভাগ নতুন নির্দেশিকা তৈরি করেছে

এই পর্যবেক্ষণ সুবিধাটি কার্যকর করার পূর্বে, দূরসংযোগ বিভাগ (DoT) স্যাটেলাইট পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য নিয়মাবলী আরও কঠোর করে তুলেছে। এখন ভারতে স্যাটেলাইট পরিষেবা চালু করার আগে কোম্পানিগুলিকে ৩০ টিরও বেশি নতুন কমপ্লায়েন্স (অনুপালন নিয়ম)-এর পালন করা বাধ্যতামূলক হবে। এর মধ্যে নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি, ডেটা প্রাইভেসি, সার্ভার লোকেশন এবং গেটওয়ে অপারেশন সম্পর্কিত নির্দেশিকা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এছাড়াও, এই সুবিধাটি পরিচালনা করার জন্য একটি বিশেষ ডিজিটাল যোগাযোগ কমিশন (DCC) গঠন করা হবে। এটি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় প্যানেল হবে, যাতে প্রতিরক্ষা, গৃহ, আইটি এবং দূরসংযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। এই প্যানেল ঠিক করবে কোন দেশের কোম্পানিকে ভারতে পরিষেবা প্রদানের অনুমতি দেওয়া হবে এবং কাকে দেওয়া হবে না।

গেটওয়ে অনুমতিতে থাকবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ

একটি বড় পরিবর্তন হল এখন ভারতে কোনও বিদেশী কোম্পানি স্যাটেলাইট পরিষেবা চালু করার আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে গেটওয়ে অ্যাক্সেসের অনুমতি নেবে। এই অনুমতি কেবলমাত্র সেই কোম্পানিগুলিকে দেওয়া হবে যারা সুরক্ষা মানদণ্ড পূরণ করবে।

এর ফলে এটি নিশ্চিত করা যাবে যে কোনও অননুমোদিত ডেটা ট্রান্সফার, সাইবার জاسوسی বা অসামাজিক উপাদান দ্বারা প্রযুক্তির অপব্যবহার হবে না। এই উদ্যোগ ভারতের ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতকে Satcom নেতা করার প্রস্তুতি

সরকারের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র নজরদারি করা নয়, বরং Satcom ক্ষেত্রে ভারতকে বিশ্বব্যাপী নেতা করার ইচ্ছা রয়েছে। এর জন্য কেবলমাত্র বিদেশী কোম্পানিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না, বরং ভারতীয় স্টার্টআপগুলিকেও এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকার এ ধরণের স্টার্টআপগুলিকে তহবিল, লাইসেন্সিংয়ে সহজতা এবং নীতিগত সহায়তা প্রদানের জন্য নতুন টেলিকম নীতি আনছে।

এই নীতির অধীনে আগামী ৫ বছরের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হবে, যার ফলে দেশে একটি শক্তিশালী, আত্মনির্ভরশীল এবং নিরাপদ স্যাটেলাইট যোগাযোগ ইকোসিস্টেম তৈরি হতে পারবে। এর সুবিধা গ্রামীণ এলাকা, সীমান্ত এলাকা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জরুরি নেটওয়ার্কিংয়ে পাওয়া যাবে।

Leave a comment