গুগলের CEO-র তরুণদের সতর্কবার্তা: AI যুগে পিছিয়ে পড়তে চান না? এখনই শিখুন

🎧 Listen in Audio
0:00

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এখন আর কোনও ভবিষ্যতের কল্পনা নয়, বরং আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। দ্রুত পরিবর্তিত এই প্রযুক্তিগত যুগে চাকরির প্রকৃতিও ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, Google DeepMind-এর CEO ডেমিস হাসাবিস তরুণদের এবং বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা জারি করেছেন – 'যদি এখন না শেখো, তাহলে ভবিষ্যতে পিছিয়ে পড়ে যাবে।'

ডেমিস হাসাবিস সেই ব্যক্তি যিনি সেই ল্যাবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেখানে Google-এর সবচেয়ে উন্নত AI প্রযুক্তি যেমন Gemini চ্যাটবট এবং ভবিষ্যতের Artificial General Intelligence (AGI) নিয়ে কাজ চলছে। তাঁর মতে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে এমন AI সিস্টেম তৈরি হতে পারে যা মানুষের মতো চিন্তা করার ক্ষমতা রাখবে।

AI যুগে তরুণদের পরামর্শ: ‘শিক্ষার শিল্প শেখো’

সম্প্রতি Google-এর বার্ষিক ডেভেলপার ইভেন্ট Google I/O 2025 এবং একটি বিখ্যাত টেক পডকাস্ট Hard Fork-এ হাসাবিস তাঁর উদ্বেগ এবং পরামর্শ ভাগ করে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, যেমন ইন্টারনেট মিলেনিয়ালদের এবং স্মার্টফোন Gen Z-কে বদলে দিয়েছে, তেমনি Gen Alpha-র পরিচয় গঠিত হবে জেনারেটিভ AI-এর মাধ্যমে।

তিনি বলছেন, আগামী সময় AI শেখার সময়। যদি আজকের তরুণরা এটি গ্রহণ না করে, তাহলে আগামী দশকে তাদের অনুতাপ করতে হতে পারে। তাঁর এই বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আজকের ছাত্ররাই কালের কর্মশক্তির ভিত্তি হবে, এবং AI তাদের কাজের ধরণ পুরোপুরি বদলে দিবে।

৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে AI-এর প্রভাবে বদলে যাবে চাকরির বাজার

হাসাবিস স্পষ্ট করে বলেছেন যে, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে AI-এর কারণে অনেক বর্তমান চাকরি বিলুপ্ত হতে পারে। কিন্তু তিনি একই সাথে যোগ করেছেন যে, AI-এর আগমনের সাথে সাথে নতুন, আরও সৃজনশীল এবং মূল্যবান চাকরিও সৃষ্টি হবে। এই পরিবর্তন সহজ হবে না, কিন্তু যারা সময়মতো নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারবে, তারাই এগিয়ে যাবে।

তিনি ছাত্রদের পরামর্শ দিয়েছেন যে, তারা কেবল কোডিং বা প্রযুক্তিগত জ্ঞানের উপর নয়, বরং AI-এর ধারণা এবং তার পিছনে থাকা চিন্তাভাবনাকেও বুঝার চেষ্টা করুক। এটি কেবলমাত্র একটি দক্ষতা নয়, বরং একটি চিন্তা করার পদ্ধতি, যা গ্রহণ করে তরুণরা আগামী চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবেলা করতে পারবে।

কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, Meta Skills-ও প্রয়োজন

হাসাবিস মনে করেন যে, ভবিষ্যতে কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত জ্ঞান (যেমন Python, Java বা Machine Learning)ই যথেষ্ট হবে না। তরুণদের এখন STEM (Science, Technology, Engineering, Mathematics)-এর পাশাপাশি meta skills অর্থাৎ চিন্তা করার ক্ষমতা, পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা (adaptability), এবং সৃজনশীলতা (creativity) যেসব ক্ষমতা রয়েছে, সেগুলিও বিকাশ করতে হবে।

তিনি বলেছেন, 'AI সেই কাজ করতে পারে যা মানুষ করে, কিন্তু যা মানুষ চিন্তা করে, অনুভব করে, নতুন কল্পনা করে – সেই ক্ষমতা AI-এর জন্য এখনও অনেক দূরের কথা। তাই আমাদের এমন ক্ষমতা বিকাশ করতে হবে যা মেশিন অনুকরণ করতে পারে না।'

‘প্রযুক্তির নিনজা बनো’: হাসাবিসের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে মন্ত্র

হাসাবিস ছাত্রদের অনুরোধ করেছেন যে, তারা প্রযুক্তির নিনজা बनুক – অর্থাৎ কেবলমাত্র প্রযুক্তিকে বুঝলেই চলবে না, বরং তাতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তিনি এটাও বলেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা কেবলমাত্র ডিগ্রির জন্য নয়, বরং নিজেকে চিনতে এবং শেখার প্রক্রিয়াকে উন্নত করার জন্য হওয়া উচিত।

তিনি মনে করেন যে, আজকের যুগ Lifelong Learning-এর যুগ – অর্থাৎ শেখা কখনো বন্ধ করা উচিত নয়। AI এবং অন্যান্য প্রযুক্তি এত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে যে, যদি কেউ আজকের তথ্যের উপরই নির্ভর করে থাকে, তাহলে সে খুব দ্রুত পিছিয়ে পড়ে যাবে।

AI-এর গতিবেগে ভয় পেও না, প্রস্তুতি নিন

AI-এর অগ্রগতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উৎসাহ ও ভয় উভয়ই রয়েছে। OpenAI-এর ChatGPT-এর পর থেকে AI-এর গতি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অনেকে এটাকে চাকরির শত্রু মনে করেন, কিন্তু হাসাবিসের চিন্তাভাবনা কিছুটা আলাদা। তিনি বলছেন যে, AI-কে যদি সঠিকভাবে বোঝা এবং ব্যবহার করা যায়, তাহলে এটি মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী সরঞ্জাম হতে পারে।

তিনি বলেছেন যে, এটি পরিবর্তনের যুগ। এমন সময়ে যারা পরিবর্তনকে গ্রহণ করে এবং নতুন দিকে এগিয়ে যায়, তারাই ভবিষ্যতে নেতা হয়ে উঠবে। AI কেবলমাত্র কম্পিউটার সায়েন্স বা ডেটা সায়েন্সে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি মেডিকেল, ফিন্যান্স, আইন, শিক্ষা এবং কলা – প্রতিটি ক্ষেত্রেই পৌঁছে যাবে।

ডেমিস হাসাবিসের সতর্কবার্তা কোনও ভয় ছড়ানোর কথা নয়, বরং তরুণদের জন্য একটি সুযোগ – নিজেদেরকে প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম করার। AI আসছে, অথবা বলা যায় এসে গেছে। এখন আমাদের উপর নির্ভর করে আমরা এড়িয়ে যাব কি না, অথবা এর অংশ হব কি না। এই ডিজিটাল যুগে ‘শিক্ষার শিল্প’ই সবচেয়ে বড় শক্তি হবে। এবং যারা এটি শিখবে, তারাই AI-এর ভয় পাবে না, বরং এটিকে ব্যবহার করে এগিয়ে যাবে।

Leave a comment