২০১১ সালের ২রা এপ্রিল বিকেলে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এক অমূল্য মুহূর্ত সাক্ষী হয় যা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল। মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্বে ভারতীয় দল শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে পরাজিত করে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে। এই জয় ছিল মাত্র ২৮ বছরের দীর্ঘ খরা কেটে যাওয়ার পাশাপাশি কোটি কোটি ভারতীয় ভক্তের জন্য এক স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
খেলাধুলা সংবাদ: ২রা এপ্রিল ২০১১, সেই ঐতিহাসিক দিন, যখন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারত ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল জিতে ইতিহাস গড়ে। মাঠে ভারতীয় খেলোয়াড়দের আনন্দের রূপ দেখার মতো ছিল। বিশেষ মুহূর্তটি ছিল যখন বিরাট কোহলি মহান সচিন তেন্ডুলকরকে নিজের কাঁধে তুলে পুরো মাঠ ঘুরে এই স্মরণীয় জয়ের উদযাপন করেন।
হাতে ত্রিবর্ণ পতাকা নিয়ে সচিন তেন্ডুলকর সহ সকল ভারতীয় খেলোয়াড়ের মুখে ছিল হাসি। কেন না হবে, নিজেদের দেশেই ভারত রাজকীয় জয় অর্জন করেছিল এবং কোটি কোটি ভক্তের দোয়া পূর্ণ হয়েছিল। ওয়াংখেড়ের মাঠ ভারতের ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হয়, যেখানে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ট্রফির জন্য তীব্র লড়াই হয়েছিল। মহেন্দ্র সিং ধোনির বিজয়ী ছক্কার সাথে সাথেই পুরো দেশ জুড়ে উৎসবের পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে এবং ভারত দ্বিতীয়বারের জন্য ওয়ানডে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়।
ধোনির ঐতিহাসিক ছক্কা এবং গাংগুলির সংগ্রামী ইনিংস
ফাইনাল ম্যাচে শ্রীলঙ্কা টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে ২৭৪ রানের শক্তিশালী স্কোর তৈরি করে। মহেলা জয়বর্ধনে ১০৩ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন, কিন্তু ভারতীয় দল মাঠে নিজের ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য্যের প্রমাণ দেয়। লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ভারতের শুরু খুবই খারাপ হয়। বীরেন্দ্র সেহওয়াগ ও সচিন তেন্ডুলকর দ্রুত আউট হওয়ায় স্টেডিয়ামে নীরবতা নেমে আসে। কিন্তু গৌতম গাংগুলি ও বিরাট কোহলি তৃতীয় উইকেটে ৮৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে ভারতকে সামলে নেয়।
বিরাটের আউট হওয়ার পর নিজেকে প্রমোট করে ক্রিজে আসা অধিনায়ক ধোনি গাংগুলির সাথে ১০৯ রানের জুটি গড়েন। গাংগুলি ৯৭ রানে আউট হলেও ধোনি তার বুদ্ধিমত্তা ও আক্রমণাত্মকতা দিয়ে ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান। ৪৯তম ওভারে নুয়ান কুলশেখরার বলে ধোনির ছক্কা আজও ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের মনে বাস করে। যখনই বল বাতাসে উড়ে স্ট্যান্ডে পড়ে, পুরো দল মাঠে ছুটে যায়। ভারত দ্বিতীয়বারের জন্য ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা নিজের করে নেয়।
সচিনের শেষ বিশ্বকাপ এবং আবেগঘন ভজ্জি
এই বিশ্বকাপ ছিল সচিন তেন্ডুলকরের ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। পুরো ভারতীয় দল এই শিরোপা 'ভগবান' সচিনের জন্য জিততে চেয়েছিল। ফাইনালে সচিন মাত্র ১৮ রান করলেও পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ৪৮২ রান করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ২টি শতক ও ২টি অর্ধশতক। টুর্নামেন্টের নায়ক যুবরাজ সিং ৩৬২ রান করে এবং ১৫ উইকেট নিয়েছিলেন, যার জন্য তাকে 'টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়' নির্বাচিত করা হয়।
ম্যাচের পরের দৃশ্য সত্যিই আবেগঘন ছিল। হরভজন সিংয়ের চোখে জল ছলছল করছিল। বিরাট কোহলি ও যুবরাজ সিং সচিনকে কাঁধে তুলে মাঠ ঘুরেছিলেন। বিরাট বলেছিলেন, "সচিন ২১ বছর ধরে দেশের বোঝা বহন করেছেন, এখন তাঁকে কাঁধে তোলার আমাদের পালা।"
ভারতের জয়ের উদযাপন
বিশ্বকাপ জয়ের পর দেশজুড়ে উৎসবের পরিবেশ ছিল। রাতভর রাস্তায় পটকা ফোটে এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ত্রিবর্ণ পতাকার সাথে ভারতীয় খেলোয়াড়দের আনন্দের ছবি আজও কোটি কোটি মানুষের মনে বাস করে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ শুধুমাত্র এক জয় ছিল না, বরং এক যুগের সমাপ্তি ও নতুন যুগের সূচনা। এটি ছিল সেই মুহূর্ত যখন কোটি কোটি ভারতীয়ের মুখে আনন্দ ও গর্বের ঢেউ ছুটে গিয়েছিল। ধোনির সেই ছক্কা আজও এক প্রতীক—বিশ্বাস, ধৈর্য্য ও অদম্য উদ্যমের।