বিপিএসসি-র শিক্ষক নিয়োগে গণিত বিষয়ে ৭৬% পদ অন্যান্য রাজ্যের প্রার্থীদের হাতে গেছে। বিহারের ছাত্ররা ক্ষুব্ধ এবং ‘ডোমিসাইল’ নীতি প্রয়োগের দাবি তুলেছে। ছাত্র সংগঠনগুলিও আন্দোলনে নেমেছে।
বিহার: বিহার লোক সেবা আয়োগ (বিপিএসসি) কর্তৃক সম্প্রতি ঘোষিত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে রাজ্যের তরুণদের মধ্যে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, গণিত বিষয়ে নির্বাচিত ২৪০৮ শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ৭৬% পদ অন্যান্য রাজ্যের প্রার্থীদের হাতে গেছে। এর ফলে বিহারের স্থানীয় ছাত্রদের ক্ষোভ বেড়েছে এবং ছাত্র সংগঠনগুলি দ্রুত ‘ডোমিসাইল’ নীতি (Domicile Policy) প্রয়োগের দাবি তুলছে। এই পুরো ঘটনার তথ্য ‘সুচনা অধিকার’ (আরটিআই)-এর মাধ্যমে পাওয়া গেছে, যা বিহারের তরুণদের চলমান ন্যায়বিচারের লড়াইয়ের দিকে আলোকপাত করেছে।
গণিত বিষয়ে বহিরাগত প্রার্থীদের আধিপত্য
বিপিএসসি-র শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় গণিত বিষয়ের মোট ২৪০৮ পদের মধ্যে সাধারণ শ্রেণীর ২৬২ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯৯ জন অর্থাৎ প্রায় ৭৫.৯৫% অন্যান্য রাজ্য থেকে এসেছেন। অর্থাৎ বিহারের স্থানীয় ছাত্ররা মাত্র ৬৩টি পদ পেয়েছেন। এই সংখ্যা স্থানীয় তরুণদের জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
‘ডোমিসাইল’ নীতির দাবি কেন?
বিহারের ছাত্রদের মতে, স্থানীয় তরুণদের চাকরি পাওয়ার প্রাথমিক অধিকার থাকা উচিত। ‘ডোমিসাইল’ নীতি অনুযায়ী, শুধুমাত্র যাঁদের বিহারে স্থায়ী বাসস্থান আছে, তাঁরাই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এর ফলে বিহারের তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং অন্যান্য রাজ্যের আধিপত্য বন্ধ হবে।
ছাত্র সংগঠনগুলি সরকারের কাছে এই নীতি প্রয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে যাতে স্থানীয় তরুণদের শোষণ না হয় এবং তারা নিজের রাজ্যেই চাকরি পেতে পারে।
ছাত্র নেতাদের প্রতিক্রিয়া
বজরঙ্গ কুমার ভগত (জন অধিকার ছাত্র পরিষদ) বলেন, বিহার সরকার তরুণদের সাথে প্রতারণা করছে। অবিলম্বে ‘ডোমিসাইল’ নীতি প্রয়োগ করা উচিত। বিহারের তরুণদের মধ্যে দক্ষতার অভাব নেই, তবুও তারা চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রবীণ কুশওয়াহা (আইসা) বলেন, তিন ধাপে শিক্ষক নিয়োগে বেশিরভাগ পদ অন্যান্য রাজ্যের প্রার্থীরা পেয়েছেন। স্থানীয় ছাত্ররা কেবল হতাশাই পেয়েছে। ‘ডোমিসাইল’ নীতি প্রয়োগ অপরিহার্য।
কুণাল পাণ্ডে (অভাবীপ) বলেন, ‘ডোমিসাইল’ নীতি প্রয়োগ না হওয়ায় বিহারের তরুণদের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। স্থানীয় তরুণদের চাকরিতে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
লালু যাদব (ছাত্র রাজদ টিএমবিইউ সভাপতি) বলেন, বিহারে সৃষ্ট চাকরির উপর বিহারের তরুণদের প্রথম অধিকার আছে। রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে ‘ডোমিসাইল’ নীতি প্রয়োগ করা উচিত।
তিন ধাপে বহিরাগত প্রার্থীদের আধিপত্য
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তিনটি ধাপেই উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডসহ অন্যান্য রাজ্যের প্রার্থীদের সংখ্যা বেশি ছিল। এর ফলে বিহারের তরুণদের মধ্যে এক ধরণের অনীহা ও হতাশা বেড়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র বিহারের সামাজিক-অর্থনৈতিক কাঠামোকেই প্রভাবিত করছে না, তরুণদের মনোবলও কমিয়ে দিচ্ছে।
তবে, বিহার সরকার এখনও পর্যন্ত ‘ডোমিসাইল’ নীতি প্রয়োগের কোনো স্পষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে না। এ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে বিরোধ চলছে। সরকারের উচিত স্থানীয় তরুণদের অধিকার রক্ষা করা এবং বিহারের ছাত্রদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করা।
এর জন্য প্রয়োজন সরকার দ্রুত ‘ডোমিসাইল’ নীতি প্রয়োগ করে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরণের সমস্যা না হয় এবং বিহারের তরুণরা নিজের রাজ্যেই কর্মসংস্থান পেতে পারে।