ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর চীন, কানাডা এবং মেক্সিকোতে ট্যারিফ বৃদ্ধি করেছিলেন। জেনে নিন ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কারণ, প্রভাব এবং ভারতে ট্যারিফের সূচনা কখন হয়েছিল।
আমেরিকা: ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ট্যারিফ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা তীব্র হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে চীনে ১০%, কানাডা এবং মেক্সিকোতে ২৫% ট্যারিফ আরোপের ঘোষণা করেছেন। এই সাথে, ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, কোন দেশ যদি প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়, তাহলে ট্যারিফ আরও বাড়ানো হবে। তার এই পদক্ষেপটি বিশেষ করে ব্রিকস দেশগুলি যেমন ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য, যাদের সম্পর্কে ট্রাম্প বলেছেন যে তারা ডলার ত্যাগ করে তাদের নতুন মুদ্রায় বাণিজ্য করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রভাব এবং ভারতের উপর প্রভাব
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর শেয়ার বাজারে তীব্র অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং এর প্রভাব ভারতীয় বাজারেও পড়েছে, কারণ ভারত ব্রিকস দেশগুলির অংশ। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং উৎপাদন খাতকে উন্নত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে আমেরিকায় উৎপাদন শিল্পের সাথে জড়িত চাকরির সংখ্যা কমেছে এবং এর পেছনে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (কম ট্যারিফে আমদানি) কে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ট্যারিফ বৃদ্ধির উদ্দেশ্য: দেশীয় বাজারকে উন্নত করা
ট্যারিফের উদ্দেশ্য হল দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করা। যখন কোন বিদেশী পণ্য কম দামে পাওয়া যায়, তখন তা দেশীয় বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে, সরকার ট্যারিফ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় যাতে দেশীয় পণ্যগুলি অগ্রাধিকার পায় এবং দেশীয় বাজার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ট্রাম্পও একই কৌশল অবলম্বন করছেন যাতে আমেরিকার উৎপাদন খাত উন্নত হয় এবং দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ট্যারিফের প্রাচীন ব্যবস্থা এবং ইতিহাস
ট্যারিফ আরোপের ব্যবস্থা নতুন নয়, বরং এটি শত শত বছরের পুরানো। প্রাচীন সভ্যতায়ও বাণিজ্য করার সময় বিভিন্ন দেশের বন্দরে ট্যারিফ আদায় করা হতো। মেসোপটেমিয়া এবং মিশরের সভ্যতায়ও ট্যারিফের উল্লেখ পাওয়া যায় এবং ভারতে মৌর্য সাম্রাজ্যের সময়ও আমদানি ও রপ্তানিতে কর আদায় করা হতো।
আধুনিক ট্যারিফ ব্যবস্থার সূচনা
আধুনিক যুগে ট্যারিফের সূচনা ইউনাইটেড কিংডম (UK) থেকে হয়। ১২৭৫ সালে এডওয়ার্ড প্রথম কাস্টম ডিউটির সূচনা করেন, যার অধীনে বাণিজ্যিক পণ্যের উপর শুল্ক আদায় করা হতো। ভারতে ট্যারিফ ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগ করার জন্য ১৯২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ট্যারিফ বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। স্বাধীনতা লাভের পর ভারত আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করে উচ্চ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছিল, যদিও ১৯৯১ সালে এতে ছাড় দেওয়া হয় এবং দেশের বাজার অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
