রাফেল যুদ্ধবিমানের ফিউজেলেজ ভারতে নির্মাণ: টাটা-দ্যাসল্ট চুক্তি

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতের অ্যারোস্পেস শিল্পে একটি বড় সাফল্য এসেছে। টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস এবং ফ্রান্সের দ্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন যৌথভাবে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার ফলে এখন থেকে রাফেল যুদ্ধবিমানের প্রধান কাঠামো অর্থাৎ ফিউজেলেজ ভারতে তৈরি হবে।

ব্যবসা: ভারতের প্রতিরক্ষা ও অ্যারোস্পেস শিল্পের জন্য একটি বড় সাফল্য এসেছে। টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড (TASL) এবং ফরাসি অ্যারোস্পেস কোম্পানি দ্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার ফলে রাফেল যুদ্ধবিমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ — ফিউজেলেজ (প্রধান কাঠামো) এখন ভারতে তৈরি হবে।

এটি প্রথমবারের মতো যখন রাফেল বিমানের কোনও প্রধান অংশ ফ্রান্সের বাইরে তৈরি হবে। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপটি কেবল ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াবে না, বরং ‘আত্মনির্ভর ভারত’র দিকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে।

রাফেলের ফিউজেলেজ ভারতে তৈরি হবে, এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

রাফেল যুদ্ধবিমান ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ২০০৬ সালে ফ্রান্স থেকে কেনা হয়েছিল। এতদিন রাফেল বিমানের ফিউজেলেজ সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সম্পূর্ণরূপে ফ্রান্সে তৈরি হত। কিন্তু নতুন প্রোডাকশন ট্রান্সফার এগ্রিমেন্ট (PTA)-এর অধীনে দ্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন ভারতের টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমসকে প্রযুক্তিগত ও উৎপাদন অধিকার হস্তান্তর করেছে।

এই চুক্তির ফলে রাফেলের ফিউজেলেজ ভারতে তৈরি হবে, যা বিমানের মূল কাঠামো এবং এর নকশা, শক্তি এবং কর্মক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়ায় ভারত সর্বোচ্চ স্তরের প্রযুক্তিগত তথ্যও পাবে, যা দেশের উৎপাদন শিল্পের জন্য একটি বড় সুযোগ।

টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস: ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদনের নতুন পরিচয়

টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড, যা টাটা গ্রুপের প্রতিরক্ষা ও অ্যারোস্পেস কোম্পানি, এই বড় চুক্তির পরে তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা আরও শক্তিশালী করবে। কোম্পানি ইতিমধ্যেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে সক্রিয়, যেমন এয়ারবাস হেলিকপ্টারের যন্ত্রাংশ তৈরি করা, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা এবং অন্যান্য বায়ুসেনা সম্পর্কিত প্রকল্প।

রাফেলের ফিউজেলেজ নির্মাণে টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমসের কাছে প্রযুক্তিগত এবং গুণমানের কঠোর দাবি পূরণ করার দায়িত্ব থাকবে, যার ফলে কোম্পানির আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম বাড়বে। এটি ভারতের উৎপাদন ক্ষমতাকে নতুন দিক দেবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করবে।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’র শক্তিবৃদ্ধি

সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ মিশনের অধীনে এই চুক্তি একটি মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হবে। এখন ভারত কেবলমাত্র বিদেশী প্রযুক্তির উপর নির্ভর করবে না বরং নিজের দেশেই উচ্চ প্রযুক্তির বিমানের প্রধান অংশ তৈরি করবে। এটি দেশে প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করবে এবং বিদেশী বিনিয়োগকেও আকর্ষণ করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তির ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের ক্ষমতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উঠে আসবে এবং দেশের প্রতিরক্ষা রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে। এই পদক্ষেপটি দেশীয় শিল্পকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।

রাফেল যুদ্ধবিমানের ভারতের জন্য গুরুত্ব

রাফেল যুদ্ধবিমান ভারতীয় বায়ুসেনার সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী জেট। এই বিমান অপারেশন সিন্ধু, কাশ্মীর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। উচ্চ গতিশীলতা, মাল্টিরোল ক্ষমতা এবং উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থার কারণে রাফেল বিমান ভারতের আকাশ নিরাপত্তাকে নতুন শক্তি দেয়। এখন যখন এর ফিউজেলেজ ভারতে তৈরি হবে, তখন কেবলমাত্র সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্বরণ আসবে না বরং প্রয়োজন অনুযায়ী বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণেও সহায়তা পাওয়া যাবে। এটি বায়ুসেনার কার্যকরী ক্ষমতা আরও বাড়াবে।

দ্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের সাথে এই অংশীদারিত্ব ভারতের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের একটি বড় সুযোগ। এটি ভারতের ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদদের উন্নত প্রযুক্তি শেখা এবং তা উন্নত করার সুযোগ দেবে। এর সাথে সাথে, এই অভিজ্ঞতা ভারতের অন্যান্য অ্যারোস্পেস প্রকল্পের জন্যও সহায়ক হবে।

টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমসের ভূমিকার বিস্তারের ফলে দেশের উৎপাদন শিল্প উপকৃত হবে এবং ভারত আন্তর্জাতিক অ্যারোস্পেস সরবরাহ শৃঙ্খলেও শক্তিশালী অবস্থান পাবে।

Leave a comment