সুদ ভর্তুকি পরিকল্পনা পুনঃপ্রবর্তনের সম্ভাবনা

🎧 Listen in Audio
0:00

২০১৫ সালে রপ্তানি উৎসাহিত করার জন্য চালু হওয়া Interest Equalisation Schemeটি ডিসেম্বর ২০২৪ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে রপ্তানিকারকরা ক্রমাগত এই স্কিমটি পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়ে আসছে। বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্ববাজারের পরিস্থিতি, আমেরিকার ট্যারিফ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্র সরকার পুনরায় এই স্কিমটি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে বিবেচনা করছে।

নয়াদিল্লি: ক্ষুদ্র ও মাঝারি রপ্তানিকারকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য Interest Equalisation Schemeটি পুনরায় চালু করা যেতে পারে। ডিসেম্বর ২০২৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই স্কিমটি পুনরায় চালু করার বিষয়ে সরকার বিবেচনা করছে।

আমেরিকা কর্তৃক আমদানির উপর শুল্ক বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার পরিবেশকে বিবেচনা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে MSME রপ্তানিকারকরা সস্তায় সুদে ঋণ পেতে পারবে।

বর্তমানে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ব্যাংক থেকে গড়ে ৮% থেকে ১২% পর্যন্ত সুদের হারে ঋণ পায়। অনেক ক্ষেত্রে MSME ইউনিটগুলির জন্য এটি আরও বেশি হয়ে যায়, যার ফলে তাদের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এর বিপরীতে, চীন সহ অন্যান্য দেশে উদ্যোক্তারা মাত্র ২% থেকে ৩% সুদের হারে ঋণ পায়। এটাই কারণ ভারতীয় MSME-দের জন্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সস্তা অর্থায়ন জরুরি

ভারত সম্প্রতি ইংল্যান্ডের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষর করেছে এবং আমেরিকার সাথেও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। এমতাবস্থায় MSME রপ্তানিকারকদের মতে, বিশ্ববাজারের সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার জন্য আর্থিক উৎসাহ প্রয়োজন।

এই প্রেক্ষিতে রপ্তানিকারকরা বারবার Interest Equalisation Scheme পুনরায় চালু করার দাবি সরকারের কাছে জানিয়েছে। গতবার বাজেটে এই স্কিমের সম্প্রসারণের কোনো উল্লেখ না থাকায় রপ্তানিকারক সংগঠনগুলি অর্থমন্ত্রী निर्मला सीतारमण-এর কাছে আলাদাভাবে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছিল।

FIEO-এর তৎকালীন সভাপতি অশ্বিনী কুমার এই পরিকল্পনা পুনরায় চালু করার পক্ষে বক্তব্য রেখে বলেছিলেন যে, চীনের তুলনায় ভারতীয় MSME-রা বেশি সুদের হারে ঋণ পায়, যার ফলে তারা বিশ্ববাজারে পিছিয়ে পড়ে।

তিনি ক্রেডিট লিমিট বৃদ্ধিরও দাবি করেছিলেন—বর্তমানে প্রতি কোম্পানির ৫০ লক্ষ টাকার সীমা বৃদ্ধি করে ১০ কোটি টাকা করার প্রয়োজনীয়তা তিনি তুলে ধরেছিলেন। তার যুক্তি ছিল, সীমিত ভর্তুকির কারণে অনেক ছোট রপ্তানিকারক নতুন অর্ডার নিতে দ্বিধা করছে।

কী এই সুদ ভর্তুকি পরিকল্পনা?

Interest Equalisation Scheme ২০০৫ সালে চালু হয়, যার লক্ষ্য ছিল রপ্তানি বৃদ্ধি এবং MSME খাতকে সস্তা অর্থায়ন সরবরাহ করা। প্রথমে এটি ৩১ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত কার্যকর ছিল, কিন্তু এর ইতিবাচক প্রভাব দেখে বারবার এটিকে বাড়ানো হয়। শেষবার এটি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়ানো হয়, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল।

এই পরিকল্পনার অধীনে রপ্তানিকারকদের প্রি-শিপমেন্ট এবং পোস্ট-শিপমেন্টের জন্য টাকায় রপ্তানি ক্রেডিটে ৩% সুদ ভর্তুকি দেওয়া হত। তথ্য অনুযায়ী, এই পরিকল্পনার মোট উপকৃতদের মধ্যে প্রায় ৮০% MSME খাতের ছিল।

এর তত্ত্বাবধান বিদেশ বাণিজ্য মহানির্দেশালয় (DGFT) এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) কর্তৃক করা হত। এটিকে সরকারের রপ্তানি উন্নয়ন নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করা হত, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।

৩০ লক্ষ কোটি টাকার অর্থায়ন ঘাটতি

স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SIDBI)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের মতে, দেশের MSME খাত তার প্রকৃত চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৪% কম ঋণ পাচ্ছে। এই ক্রেডিট ঘাটতি প্রায় ৩০ লক্ষ কোটি টাকা, যা এই খাতের আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলিকে উন্মোচন করে।

SIDBI-এর সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত উদ্যোগগুলির মধ্যে ২২% ঋণের অপ্রাপ্যতাটিকে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এটা স্পষ্ট করে যে অর্থায়নের সমস্যা এখনও MSME উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে বিরাজমান।

সরকারী তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালের বার্ষিক অসম্পূর্ণ খাতের উদ্যোগের সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ৭.৩৪ কোটি MSME ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ৯৮.৬৪% মাইক্রো, ১.২৪% ক্ষুদ্র এবং মাত্র ০.১২% মাঝারি উদ্যোগ।

ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড MSME খাত

ভারতের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র, লঘু ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME)-এর ভূমিকা ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। SIDBI-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট মূল্য সংযোজন (GVA)-তে MSME-এর অবদান ২০২০-২১ সালে ২৭.৩% ছিল, যা ২০২১-২২ সালে বেড়ে ২৯.৬% এবং ২০২২-২৩ সালে ৩০.১% হয়েছে।

MSME খাত শুধুমাত্র দেশীয় বাজারেই নয়, রপ্তানির ক্ষেত্রেও দ্রুত অগ্রগতি করেছে। ২০২০-২১ সালে যেখানে এই ইউনিটগুলির রপ্তানি ছিল ৩.৯৫ লক্ষ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৪-২৫ সালে এটি প্রায় ১২.৩৯ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে—যা এই খাতের আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান দখলকে তুলে ধরে।

রপ্তানিকারক MSME-এর সংখ্যায়ও দ্রুত বৃদ্ধি হয়েছে—২০২০-২১ সালে ৫২,৮৪৯ ইউনিট থেকে বেড়ে ২০২৪ সালের মে মাসে এটি ১,৭৩,৩৫০-তে পৌঁছেছে।

ভারতের মোট রপ্তানিতেও এই খাতের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে

  • ২০২২-২৩ সালে: ৪৩.৫৯%
  • ২০২৩-২৪ সালে: ৪৫.৭৩%
  • ২০২৪-২৫ সালে: ৪৫.৭৯%

সরকারও MSME রপ্তানিকে গতি দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে ক্রেডিট গ্যারান্টি পরিকল্পনার অধীনে MSME রপ্তানিকারকদের জন্য ঋণ সীমা বৃদ্ধি করে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

Leave a comment