মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের নামে জালিয়াতি: TRAI-এর গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের নামে জালিয়াতি: TRAI-এর গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা
সর্বশেষ আপডেট: 05-06-2025

TRAI মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের নামে চলমান জালিয়াতি প্রতারণার বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেছে। প্রতারকরা লোকজনকে প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। TRAI জানিয়েছে যে তারা অথবা কোনো বৈধ কোম্পানি এই ধরণের কোনো কল বা মেসেজ পাঠায় না। লোকজনকে সতর্ক থাকার এবং আনুষ্ঠানিক যাচাই ছাড়া কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

TRAI: যদি আপনিও মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করে প্রতি মাসে উল্লেখযোগ্য অর্থ উপার্জনের স্বপ্ন দেখেন, তাহলে এখন সতর্ক হয়ে যান। টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (TRAI) একটি বড় সতর্কবার্তা জারি করে জানিয়েছে যে, সাইবার প্রতারকরা মোবাইল টাওয়ার ইন্সটল করার নামে লোকজনকে ফাঁদে ফেলে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে। TRAI স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই ধরণের কোনো বাণিজ্যিক প্রস্তাবের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের নামে চলছে নতুন অনলাইন প্রতারণা

ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের বর্ধিত ব্যবহার যেখানে একদিকে সুবিধা বৃদ্ধি করেছে, সেখানে অন্যদিকে সাইবার অপরাধীদের নতুন নতুন সুযোগও দিয়েছে। সম্প্রতি উঠে আসা একটি নতুন প্রতারণায় সাইবার প্রতারকরা লোকজনকে তাদের বাড়ির ছাদে অথবা খালি জমিতে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করছে।

এই জালিয়াতিতে প্রতারকরা নিজেদের TRAI অথবা কোনো বড় টেলিকম কোম্পানির কর্মী বলে পরিচয় দেয় এবং দাবি করে যে, যদি আপনি আপনার বাড়ি অথবা জমিতে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করেন তাহলে প্রতি মাসে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। এর বিনিময়ে তারা লোকজনের কাছে ব্যক্তিগত তথ্য, অগ্রিম ফি অথবা রেজিস্ট্রেশন চার্জ চায়।

TRAI সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় প্রকাশ করেছে

TRAI সম্প্রতি তার অফিসিয়াল X (পূর্বের টুইটার) হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট শেয়ার করেছে, যেখানে একটি কলের ছবি দেখানো হয়েছে। কলকারী নিজেকে TRAI-এর কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিকে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করে ২৫,০০০ টাকা মাসিক আয় করার প্রস্তাব দেয়। কলের শেষে সে মোবাইলে ‘৯’ টিপতে বলে।

TRAI এই পোস্টে স্পষ্ট করে বলেছে যে, সংস্থার এই ধরণের কোনো প্রস্তাবের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। TRAI টাওয়ার স্থাপনের জন্য কাউকে কল করে না এবং কোনো NOC (No Objection Certificate) জারি করে না। এই ধরণের কল এবং মেসেজ সম্পূর্ণ জাল, এবং এগুলো থেকে সাবধান থাকা প্রয়োজন।

প্রতারকদের কৌশল – কিভাবে প্রলোভন দেখায়?

  1. জাল কল এবং SMS: প্রতারকরা আপনাকে কল বা মেসেজ করে জানায় যে XYZ টেলিকম কোম্পানি আপনার এলাকায় মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করতে চায়।
  2. আকর্ষণীয় প্রস্তাব: প্রতি মাসে উচ্চ আয়ের প্রতিশ্রুতি দেয় – যেমন ২৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়।
  3. জাল ওয়েবসাইট এবং নথি: অনেক সময় তারা জাল ওয়েবসাইট তৈরি করে, জাল নথি (NOC, রেজিস্ট্রেশন ফর্ম) পাঠায় যাতে লোকজন প্রতারিত হয়।
  4. রেজিস্ট্রেশন ফি অথবা প্রসেসিং চার্জ: লোকজন যখন এই প্রস্তাবে আগ্রহ দেখায় তখন তাদের কাছে রেজিস্ট্রেশন, নথি যাচাই অথবা প্রসেসিংয়ের নামে টাকা চায়।
  5. একবার টাকা গেলে, নম্বর বন্ধ: ব্যক্তি যখন টাকা পাঠায়, নম্বর বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রতারক পালিয়ে যায়।

TRAI-এর সতর্কতা – এই বিষয়গুলিতে লক্ষ্য রাখুন

TRAI এই প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য সাধারণ মানুষকে কিছু প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে:

  • TRAI টাওয়ার স্থাপনের জন্য কারো সাথে যোগাযোগ করে না।
  • কোনো বৈধ টেলিকম কোম্পানি সরাসরি কল বা মেসেজের মাধ্যমে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের প্রস্তাব দেয় না।
  • অজানা নম্বর থেকে আসা কল বা মেসেজে বিশ্বাস করবেন না।
  • কোনো অর্থ প্রদানের আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করে নিন।
  • জাল কল বা SMS আসলে তা অবিলম্বে ব্লক করুন এবং cybercrime.gov.in এ অভিযোগ দায়ের করুন।

যদি আপনার কাছেও এমন কল বা মেসেজ আসে, তাহলে কি করবেন?

  1. কখনোই তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিন না।
  2. জাল প্রস্তাব সম্পর্কে আপনার আশেপাশের লোকজনকে জানান।
  3. মোবাইলে Truecaller এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করুন যাতে অজানা নম্বর চিহ্নিত করা যায়।
  4. যদি আপনি ইতিমধ্যেই কোনো প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে অবিলম্বে নিকটস্থ সাইবার ক্রাইম থানায় রিপোর্ট করুন।
  5. এই ধরণের তথ্য সোশ্যাল মিডিয়া অথবা WhatsApp গ্রুপে শেয়ার করুন, যাতে অন্যরা সতর্ক থাকতে পারে।

মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের আসল প্রক্রিয়া কি?

যদি কোনো বৈধ কোম্পানি আপনার এলাকায় মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করতে চায় তাহলে তারা স্থানীয় পৌরসভা অথবা পঞ্চায়েত থেকে অনুমতি নিয়ে, লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করে, সকল আইনি নথিপত্র নিয়ে যোগাযোগ করে। এতে কখনোই আগে থেকে টাকা চাওয়া হয় না, এবং সকল প্রক্রিয়া স্বচ্ছ থাকে।

কিছু বৈধ টাওয়ার কোম্পানি যেমন Indus Towers, ATC India, Bharti Infratel ইত্যাদি আছে, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই কাজ করে। কিন্তু এই কোম্পানিগুলো কখনো কল বা SMS এর মাধ্যমে এই ধরণের চুক্তি করে না।

লোকজনকে সতর্ক করার প্রয়োজন

এই সময় সাধারণ মানুষের ডিজিটাল সচেতনতার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। প্রতিদিন নতুন নতুন প্রতারণা উঠে আসছে। সাইবার প্রতারকরা লোকজনের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে। তাই যদি কারো কাছে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন অথবা অন্য কোনো অস্বাভাবিক প্রস্তাব আসে, তাহলে প্রথমে যাচাই করে নিন এবং আনুষ্ঠানিক যাচাই ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নিন না।

Leave a comment