সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) দল তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশকে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছে। সিরিজের শুরু UAE-র জন্য ভালো ছিল না, প্রথম ম্যাচে তাদের পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
খেলাধুলার সংবাদ: বুধবারের দিন ক্রিকেট জগতে একটি ঐতিহাসিক মোড় এনেছে যখন একটি অ্যাসোসিয়েট দল—সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE)—ক্রিকেটের পূর্ণ সদস্য দেশ বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক সিরিজে হারিয়ে সকলকে চমকে দিয়েছে। তিন ম্যাচের এই সিরিজে UAE ২-১ ব্যবধানে জয়ী হয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, এখন তাদের হালকাভাবে নেওয়া একটা বড় ভুল হতে পারে।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নির্ণায়ক তৃতীয় ম্যাচে UAE বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে পরাজিত করেছে। এই জয়ের সাথে UAE তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের জন্য কোনো টেস্ট-মান্যতা প্রাপ্ত দলের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে। এর আগে ২০২১ সালে তারা আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছিল।
তৃতীয় ম্যাচে UAE-র চমৎকার পারফরম্যান্স
UAE-র অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাঁর বোলাররা এই সিদ্ধান্তকে সঠিক করে দেখান। বাঁ-হাতি স্পিনার হায়দার আলী মাত্র ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসকে ধ্বংস করে দেন। বাংলাদেশের শীর্ষ তিনজন ব্যাটসম্যান খাতাও খুলতে পারেননি এবং পুরো দল চাপে পড়ে যায়। যদিও বাংলাদেশের দল কোনোভাবে ১৬২ রানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, কিন্তু এই স্কোর UAE-র শক্তিশালী ব্যাটিংয়ের সামনে অপর্যাপ্ত ছিল।
শরাফু-আসিফের ধুমকেতু ব্যাটিংয়ে জয়
১৬২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে UAE-র শুরুটা কিছুটা হোঁচট খায়, যখন অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম দ্রুত আউট হন। কিন্তু এর পরে মাঠে নামেন আলিশান শরাফু এবং আসিফ খান এবং বাংলাদেশী বোলারদের জমজমাট খবর দেন। উভয়ই চতুর্থ উইকেটের জন্য ৮৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব গড়ে তোলেন, যা ম্যাচের ধারা সম্পূর্ণরূপে UAE-র পক্ষে ঘুরিয়ে দেয়।
আলিশান শরাফু ৪৭ বলে অপরাজিত ৬৮ রান করেন, যাতে ৫টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল। অন্যদিকে, আসিফ খান মাত্র ২৬ বলে ৪১ রান করেন এবং তার ইনিংসে ৫টি বিশাল ছক্কা ছিল। UAE ১৯.১ ওভারে লক্ষ্য অর্জন করে এবং ৭ উইকেটে একতরফা জয় অর্জন করে।
UAE-র তিন সুপারস্টার: জয়ের প্রকৃত নায়ক
- আলিশান শরাফু – নির্ণায়ক ম্যাচে অসাধারণ অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস খেলে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন। চাপের পরিস্থিতিতে তার সংযত ও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দলকে জয়ের পথে নিয়ে যায়।
- আসিফ খান – ঝড়ো ব্যাটিং করে ২৬ বলে ৪১ রান করেন এবং শরাফুর সাথে মিলে ম্যাচটিকে বাংলাদেশের আওতা থেকে বের করে দেন।
- হায়দার আলী – মাত্র ৭ রান দিয়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন এবং বাংলাদেশের ব্যাটিংকে প্রারম্ভিক ধাক্কা দেন, যার ফলে দলটি সামলে উঠতে পারেনি।
অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিমের সিরিজে দাপট
UAE-র অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম যদিও তৃতীয় ম্যাচে মাত্র ৯ রান করেন, কিন্তু পুরো সিরিজে তাঁর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি তিন ম্যাচে মোট ১৪৫ রান করেছেন, যাতে দুটি অর্ধশতক রয়েছে এবং তাঁর গড় ৪৮.৩৩। ওয়াসিমের অধিনায়কত্বে UAE কেবলমাত্র দলগত খেলাই দেখায়নি বরং মানসিক শক্তিও দেখিয়েছে, যা সাধারণত শীর্ষ দলগুলোতে দেখা যায়।
সিরিজে সর্বাধিক উইকেট নেওয়া খেলোয়াড় ছিলেন UAE-র ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ জাওয়াদুল্লাহ। তিনি মোট ৭ উইকেট নিয়েছেন এবং প্রতি ম্যাচে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বিরক্ত করেছেন। তার নিয়ন্ত্রিত লাইন এবং লেন্থ বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।