উত্তর ভারতে শৈত্যপ্রবাহ: দিল্লি সহ একাধিক রাজ্যে তাপমাত্রা হ্রাস, সতর্কতা জারি

উত্তর ভারতে শৈত্যপ্রবাহ: দিল্লি সহ একাধিক রাজ্যে তাপমাত্রা হ্রাস, সতর্কতা জারি
সর্বশেষ আপডেট: 26-12-2024

উত্তর ভারতে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব বেড়েছে, এবং আজ (২৬শে ডিসেম্বর ২০২৪) পুরো অঞ্চল ঠান্ডার কবলে থাকবে। দিল্লিতে যেখানে কুয়াশার প্রভাব দেখা যাবে, সেখানে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং কাশ্মীর তীব্র ঠান্ডার সাথে লড়াই করছে। হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের উঁচু এলাকাগুলোতে তুষারপাত চলছে, যার কারণে তাপমাত্রা অনেক কমে গেছে। রাজস্থানেও শীত ও কুয়াশার কারণে পরিস্থিতি আরও ঠান্ডা হয়ে গেছে। দিল্লিতে আগামী তিন দিন হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

দিল্লির আবহাওয়া: কুয়াশা, ঠান্ডা এবং হালকা বৃষ্টি

দিল্লিতে ২৬, ২৭ এবং ২৮শে ডিসেম্বর হালকা বৃষ্টি ও কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই সময় দিল্লিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকতে পারে। বুধবার দিল্লির বেশিরভাগ এলাকায় সকালে কুয়াশা ছিল, যদিও দিনের বেলায় হালকা রোদের দেখা মিলেছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই সময় কুয়াশার সাথে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে।

পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় তীব্র ঠান্ডা

পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পাঞ্জাবের ফরিদকোটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে, যা রাজ্যের শীতলতম এলাকা ছিল। পাঞ্জাবের অন্যান্য এলাকা যেমন অমৃতসর এবং গুরুদাসপুরে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। হরিয়ানাতেও শীতের প্রকোপ দেখা গেছে এবং অনেক এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। চণ্ডীগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কাশ্মীরে হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা

কাশ্মীরে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে এবং তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে চলে গেছে। শ্রীনগরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে পহেলগামে এই তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গুলমার্গ এবং কাজিগন্ডের মতো এলাকাগুলোতেও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে ছিল। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কাশ্মীরে আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। কাশ্মীর এই মুহূর্তে "চিল্লা-এ-কালাঁ"-এর কবলে, যা শীতকালের সবচেয়ে কঠিন সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।

হিমাচল প্রদেশে তুষারপাত ও রাস্তা বন্ধ

হিমাচল প্রদেশেও তুষারপাত অব্যাহত রয়েছে। রাজ্যের কিন্নর, লাহৌল ও স্পিতি, শিমলা, কুল্লু, মান্ডি এবং চাম্বা জেলায় তুষারপাত হচ্ছে। এর কারণে রাজ্যে কমপক্ষে ২33টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, যার মধ্যে ১৪৫টি রাস্তা শিমলা জেলায় বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া দফতর আগামী কয়েক দিনে আরও তুষারপাতের সতর্কতা জারি করেছে।

উত্তরাখণ্ডে বরফের বাতাস ও তুষারপাত

উত্তরাখণ্ডেও বরফের বাতাস বইছে এবং চামোলি, উত্তরকাশী ও অন্যান্য উঁচু এলাকায় তুষারপাত হচ্ছে। নিচু এলাকাগুলোতে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে, যেখানে পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বদ্রীনাথ, কেদারনাথ এবং নন্দা দেবী জাতীয় উদ্যানের মতো এলাকাগুলোতে তুষারপাত চলছে এবং আগামী কয়েক দিনে এটি আরও বাড়তে পারে।

রাজস্থানে ঘন কুয়াশা ও শীত

রাজস্থানেও শীতের প্রভাব অনেক বেড়েছে। রাজ্যের বেশিরভাগ অংশে তীব্র ঠান্ডা এবং ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। বুধবার পূর্ব রাজস্থানে হালকা বৃষ্টি হয়েছে, যেখানে পশ্চিম রাজস্থানে শৈত্য দিবসও রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ২৬শে ডিসেম্বর থেকে একটি নতুন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সক্রিয় হওয়ার কারণে উদয়পুর, আজমির, কোটা, জয়পুর, ভরতপুর এবং বিকানের বিভাগের কিছু অংশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
শীত থেকে বাঁচার উপায়

আবহাওয়া দফতর জনসাধারণকে পরামর্শ দিয়েছে যে, তারা যেন এই শীত থেকে বাঁচতে গরম কাপড় পরে বাইরে বের হন এবং বিশেষ করে গাড়িচালকদের কুয়াশার কারণে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলেছেন যে, ক্রমবর্ধমান ঠান্ডা এবং কুয়াশার কারণে রাস্তায় চলার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং গতি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

আজ, ২৬শে ডিসেম্বর ২০২৪, উত্তর ভারতের আবহাওয়া শীত ও কুয়াশায় ভরা থাকবে। দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে শীত বাড়বে, যেখানে রাজস্থানে ঘন কুয়াশা থাকবে। তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং শীত থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া দফতর সকল অঞ্চলের নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণকারী মানুষদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে।

Leave a comment