দিল্লি-এনসিআর সহ দেশজুড়ে আবহাওয়ার রূপান্তর দ্রুততার সাথে ঘটছে। যেখানে কিছু রাজ্যে আবারও তীব্র গরমের দাপট শুরু হয়েছে, সেখানে অনেক এলাকায় মৌসুমি বৃষ্টির আগমন হয়েছে। এইমধ্যে, আবহাওয়া দপ্তর আগামীকালের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে।
আবহাওয়ার আপডেট: দেশের অনেক অংশে আবহাওয়ার রূপান্তর হঠাৎ করেই ঘটেছে। দিল্লি-এনসিআর, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলিতে তীব্র গরম এবং লু-র প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে, অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতে মৌসুমি বৃষ্টির আগে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই রাজ্যগুলিতে প্রবল বাতাস, বজ্রপাত এবং বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি গরমের কারণে স্বাস্থ্য এবং জনজীবনে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করেছে। আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক আজ দেশের বিভিন্ন অংশে আবহাওয়া কেমন থাকবে।
দিল্লি-এনসিআরে শুষ্ক এবং প্রখর গরমের ধারা অব্যাহত
দিল্লি-এনসিআরে গরমের প্রকোপ অত্যন্ত তীব্র রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের মতে, এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যার ফলে মানুষের গরম থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হবে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশ কম, প্রায় ২০-৩০ শতাংশ থাকবে, যার ফলে তাপমাত্রার প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাবে।
এই অঞ্চলে বাতাসের গতি ৭-১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা থাকার কারণে ধুলো এবং গরম বাতাসের ঝাপটাও অনুভূত হবে। আবহাওয়া দপ্তর এই অঞ্চলে লু-র সতর্কতা জারি করেছে, যার ফলে বাইরে বেরোনোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করার প্রয়োজন রয়েছে। গরমের কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
উত্তরপ্রদেশের পূর্ব এবং পশ্চিম অংশে আবহাওয়ায় পার্থক্য
উত্তরপ্রদেশের পূর্ব জেলা যেমন লখনউ, বারাণসীতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সাথে বজ্রপাত এবং প্রবল বাতাসের প্রভাব থাকবে। এখানে তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে কিছুটা গরম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জেলা মেরঠ, আগ্রায় শুষ্ক এবং গরম আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে এবং লু-র প্রকোপ অব্যাহত থাকবে। এখানে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। প্রবল বাতাস এবং লু-র কারণে মানুষকে ঘরে থাকার এবং জলের প্রতি যত্নবান থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রাজস্থানে তীব্র লু এবং ধুলোবালির ঝড়ের আশঙ্কা
রাজস্থানের পশ্চিম অংশে লু-র তীব্রতা চরমে রয়েছে। বিকানের, জোধপুরের মতো শহরগুলিতে তাপমাত্রা ৪২-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এর সাথে সাথে ৪০-৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ধুলোবালির ঝড়ও আসতে পারে, যার ফলে দৃশ্যমানতা কমতে পারে এবং যানবাহনের চলাচলে প্রভাব পড়তে পারে। পূর্ব রাজস্থানের জয়পুর, কোটা-র মতো অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত বা বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে এখানে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকতে পারে। তবে, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৯-৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে।
মধ্যপ্রদেশে মিশ্র আবহাওয়ার প্রভাব
মধ্যপ্রদেশে আবহাওয়ার দ্বৈত রূপ দেখা যাবে। পূর্ব অংশ যেমন জবলপুর, সাগরে বজ্রপাতের সাথে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা তাপমাত্রাকে ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে। অন্যদিকে, ভোপাল এবং ইন্দোরের মতো পশ্চিম অংশে আবহাওয়া গরম এবং শুষ্ক থাকবে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং লু-র প্রভাবও বজায় থাকবে।
মহারাষ্ট্রে ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে অরেঞ্জ সতর্কতা জারি
মহারাষ্ট্রের কোঙ্কণ এবং মধ্য মহারাষ্ট্র অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টির পূর্ববর্তী কার্যকলাপ তীব্রতর হচ্ছে। মুম্বাই, পুনে, নাশিকের মতো শহরগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রত্নগিরি এবং কোলহাপুরে বজ্রপাতের সাথে প্রবল বাতাস (৫০-৬০ কিমি/ঘণ্টা) বইতে পারে। এই এলাকাগুলিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। মারাঠোয়াড়া এবং বিদর্ভে হালকা বৃষ্টিপাত হবে, তবে গরমের প্রভাব এখানেও অনুভূত হবে। আবহাওয়া দপ্তর এই অঞ্চলের জন্য অরেঞ্জ সতর্কতা জারি করেছে এবং মানুষকে নিরাপদ স্থানে থাকার এবং আকস্মিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
গুজরাটে উমস এবং গরমের দ্বৈত প্রভাব
গুজরাটেও গরম এবং উমসের প্রভাব অব্যাহত থাকবে। সৌরাষ্ট্র এবং কচ্ছ অঞ্চলে ছিটফোঁটা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে আহমেদাবাদ, গান্ধীনগরের মতো শহরগুলিতে লু-র প্রকোপ অব্যাহত থাকবে। এখানে তাপমাত্রা ৪০-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা ৪০-৫০ শতাংশ থাকবে, যার ফলে উমসও বৃদ্ধি পাবে। হালকা ঝড় এবং প্রবল বাতাস (৩০-৪০ কিমি/ঘণ্টা) -এর প্রভাবও দেখা যেতে পারে।
উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার আশঙ্কা
অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরার মতো উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বজ্রপাতের সাথে ৪০-৫০ কিমি/ঘণ্টা বেগে প্রবল বাতাস বইবে। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া আবহাওয়ার ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে বন্যা এবং ভূমিধ্বসের ঝুঁকি রয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২০-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। স্থানীয় প্রশাসন জনজীবনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সতর্কতা বৃদ্ধি করেছে।
দক্ষিণ ভারতে মৌসুমি বৃষ্টির আগমন
কেরালে মৌসুমি বৃষ্টির আগে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে তাপমাত্রা ৩০-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। তামিলনাড়ু, কর্ণাটকের উপকূলীয় অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে, অন্যদিকে অন্ধ্রপ্রদেশে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা ৩২-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। লক্ষদ্বীপেও ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে হালকা বৃষ্টিপাত এবং শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা
হিমাচল প্রদেশের চম্বা, কাঙ্গড়া, শিমলা জেলায় হালকা বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরাখণ্ডের কিছু অংশেও বৃষ্টির বৃষ্টিপাত হতে পারে। প্রবল বাতাস এবং শিলাবৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে।
বিহারে কৃষকদের জন্য বৃষ্টিপাতের সতর্কতা
বিহারের পটনা, গয়া, ভাগলপুরের মতো জেলাগুলিতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বজ্রপাত এবং প্রবল বাতাস (৪০-৫০ কিমি/ঘণ্টা) এর সাথে বজ্রপাতের ঝুঁকিও রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর কৃষকদের ফসলের সুরক্ষার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে।