মোদীর ক্রোয়েশিয়া সফর: প্রতিরক্ষা ও ব্যবসায় ঐতিহাসিক চুক্তি

মোদীর ক্রোয়েশিয়া সফর: প্রতিরক্ষা ও ব্যবসায় ঐতিহাসিক চুক্তি
সর্বশেষ আপডেট: 19-06-2025

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্রোয়েশিয়া সফরকালে ভারত ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে স্বাক্ষর হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্রোয়েশিয়া সফর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই সফরকালে ভারত ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার প্রভাব কেবলমাত্র দুই দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর বার্তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষ করে চীন ও পাকিস্তানের মতো দেশ এই জোটের কারণে কৌশলগতভাবে অস্বস্তিতে পড়তে পারে।

প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিতে ঐতিহাসিক চুক্তি

মোদী ও ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ প্লেনকোভিকের বৈঠকের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাটি ছিল প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে। ভারত ও ক্রোয়েশিয়া এখন প্রতিরক্ষা গবেষণা, সাইবার সুরক্ষা, সমুদ্র প্রযুক্তি ও জাহাজ নির্মাণের মতো ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করবে। এর ফলে ভারত ইউরোপীয় প্রযুক্তির সুবিধা পাবে এবং আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকেও শক্তিশালী করা হবে।

ব্যবসায়ে নতুন গতি

ভারত ও ক্রোয়েশিয়া পরবর্তী পাঁচ বছরে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই ঘোষণা এমন সময়ে আসছে যখন বিশ্ব চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে চেষ্টা করছে। ভারত ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষিজাত পণ্য, সেমিকন্ডাক্টর, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তির মতো ক্ষেত্রে ব্যবসা সম্প্রসারণের রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছে।

ক্রোয়েশিয়ার কৌশলগত অবস্থান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ভারতকে ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বার প্রদান করতে পারে। ভারতের সফ্টওয়্যার ক্ষমতা ও ক্রোয়েশিয়ার হার্ডওয়্যার উৎপাদন ক্ষমতা মিলে নতুন একটি উদ্ভাবন মডেল তৈরি করতে পারে।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধতা

দুই দেশই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতে সম্প্রতি সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে এই সময়ে ক্রোয়েশিয়ার সমর্থন অত্যন্ত প্রশংসনীয়। দুই দেশই স্পষ্ট করেছে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা প্রয়োজন এবং তাতে দ্বৈত মানদণ্ড থাকা উচিত নয়।

চীন-পাকিস্তান কেন চিন্তিত হবে?

ভারত ও ক্রোয়েশিয়ার এই নতুন জোটের কারণে চীন ও পাকিস্তানের মতো দেশের উদ্বেগ বাড়া স্বাভাবিক। প্রথম কারণ হল ইউরোপের দেশগুলি প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে ভারতের সাথে খোলাখুলি সহযোগিতা করছে, যা চীনের বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণবাদী নীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

পাকিস্তানের উদ্বেগের কারণ হল ভারতের আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতকে বিশ্বব্যাপী সমর্থন পাওয়ার ফলে পাকিস্তানের ইমেজ ক্রমশই ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ক্রোয়েশিয়ার মতো ইউরোপীয় রাষ্ট্রের ভারতের পাশে দাঁড়ানো পাকিস্তানের কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে প্রমাণ করে।

কূটনীতিতে মোদীর নতুন কৌশল

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফর দেখায় যে ভারত এখন কেবলমাত্র এশিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং তার লক্ষ্য বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করা। মোদীর বিদেশনীতিতে এখন ছোট কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলিও গুরুত্ব পাচ্ছে। এর ফলে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত সহযোগিতা

ভারত ও ক্রোয়েশিয়া সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, যোগ, আয়ুর্বেদ ও ভারতীয় ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়ানোর সম্মতি জানিয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে ছাত্র ও শিক্ষক বিনিময় কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইউরোপে ভারতের নতুন উপস্থিতি

ক্রোয়েশিয়ার সাথে এই জোট ভারতকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের সাথেও সংযুক্ত করতে পারে। যদি ভারত ক্রোয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করে, তাহলে সে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেও সহজে প্রবেশ করতে পারবে। এর ফলে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া’র বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

কূটনৈতিক বার্তা: বিশ্ব ভারতের উপর আস্থা রাখে

এই সফর কেবলমাত্র কাগজে-কলমে চুক্তি সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিশ্ব সম্প্রদায়কে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে ভারত একটি নির্ভরযোগ্য, স্থিতিশীল ও দূরদর্শী অংশীদার। সন্ত্রাসবাদ, সরবরাহ শৃঙ্খল, শক্তি সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিশ্বব্যাপী সমস্যাগুলিতে ভারতের ভূমিকা ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

Leave a comment