ইরাণ আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (আইএইএ)-এর সাথে সহযোগিতা বন্ধের বিল পাস

ইরাণ আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (আইএইএ)-এর সাথে সহযোগিতা বন্ধের বিল পাস
সর্বশেষ আপডেট: 7 ঘণ্টা আগে

ইরাণ আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (আইএইএ)-এর সাথে সহযোগিতা বন্ধ করার বিল পাস করেছে। এর ফলে এখন পরমাণু সাইটগুলোর আন্তর্জাতিক নজরদারি থাকবে না। আমেরিকা ও ইসরায়েলের হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

ইরাণ পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত: ইরাণীয় পার্লামেন্ট (মজলিস) আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সাথে সহযোগিতা বন্ধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল অনুমোদন করেছে। এই পদক্ষেপটি ইসরায়েল ও আমেরিকার দ্বারা ইরাণের পরমাণু ঘাঁটিগুলোর ওপর হামলার পর নেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক নজরদারি ছাড়া ইরাণের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে কিনা?

ইরাণীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

ইসরায়েলের সাথে সাম্প্রতিক সংঘাত এবং মার্কিন হামলার পর ইরাণীয় পার্লামেন্ট বুধবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করেছে, যেখানে আইএইএ-এর সাথে সহযোগিতা বন্ধ করার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই আইনের কার্যকর হওয়ার পর, আন্তর্জাতিক সংস্থাটিকে ইরাণের পরমাণু সাইটগুলোতে পরিদর্শন করার আগে ইরাণের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি নিতে হবে।

আইএইএ-এর সমালোচনা ও বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন

তেহরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে তার পরমাণু কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। তবে সম্প্রতি আইএইএ একটি প্রস্তাব পাস করেছে যেখানে ইরাণকে বিস্তার চুক্তি (Non-Proliferation Treaty) লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইরাণীয় পার্লামেন্টের মতে, আইএইএ ইরাণের পরমাণু সাইটগুলোতে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানায়নি, যা তার আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

নজরদারি ব্যবস্থায় কঠোর বিধিনিষেধ

পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিল অনুযায়ী, এখন আইএইএ ইরাণের পরমাণু সুবিধাগুলোতে ক্যামেরা স্থাপন করতে পারবে না, নিয়মিত পরিদর্শনও করতে পারবে না এবং ইরাণ থেকে রিপোর্টও माग করতে পারবে না। ইরাণের যুক্তি হলো, যতক্ষণ না পরমাণু সাইটগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সংস্থার সাথে সহযোগিতা সম্ভব নয়।

মার্কিন ও ইসরায়েলের হামলা পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে

গত কয়েক সপ্তাহে আমেরিকা ইরাণের প্রধান পরমাণু সাইট - ফোর্দো, ইসফাহান ও নাতাজের ওপর ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ দাবি করেছে যে এই হামলায় ইরাণের পরমাণু সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে ইরাণের কর্মকর্তাদের মতে, তারা ইতোমধ্যেই তাদের বেশিরভাগ পরমাণু উপকরণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন, যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ সীমিত ছিল।

আইএইএ-এর অবস্থান দুর্বল, পরিদর্শনে সংকট

আইএইএ-এর প্রধান রাফেল গ্রोसी বলেছেন যে তিনি চান তাদের পরিদর্শক দ্রুত ইরাণের সেই প্ল্যান্টগুলোতে ফিরে যান যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ (enrichment) কার্যক্রম চলছিল। ১৩ জুন ইসরায়েলের হামলার আগে এই সাইটগুলোতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চলছিল এবং আইএইএ-এর সেখানে যাওয়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।

যদি ইরাণ সম্পূর্ণরূপে আইএইএ-এর সাথে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়, তাহলে সংস্থাটির কাছে ইরাণের পরমাণু কর্মসূচি কোন দিকে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকবে না।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি

রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরাণ ইতোমধ্যেই ইউরেনিয়ামকে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ (enrich) করেছে। পরমাণু বোমা তৈরির জন্য ৯0 শতাংশ বিশুদ্ধতার ইউরেনিয়াম প্রয়োজন হয়। এই পরিস্থিতিতে ইরাণ কেবল একটি পদক্ষেপ দূরে অবস্থান করছে। যদিও তেহরান ক্রমাগত বলছে যে তার পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো উদ্দেশ্য নেই, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বিষয়ে আস্থা রাখতে রাজি নয়।

Leave a comment