ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে রাশিয়া দাবি করেছে যে বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্র নিরাপদ। ইসরায়েল রুশ কর্মীদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কেন্দ্রটিতে হামলা চেরনোবিলের মতো এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
Israel Iran conflict: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে বুশেহরস্থিত ইরানের একমাত্র সক্রিয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে। এই বিষয়ে রাশিয়া স্পষ্টীকরণ দিয়েছে।
বুশেহর কেন্দ্রে হামলা হয়নি: রাশিয়া
রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটমের প্রধান আলেক্সি লিখাচেভ জানিয়েছেন যে ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পূর্ণ নিরাপদে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় কাজ করছে। তিনি জানিয়েছেন যে কেন্দ্রটিতে শত শত রুশ প্রযুক্তিবিদ কর্মরত আছেন এবং এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রাশিয়া জানিয়েছে যে ইসরায়েল বুশেহর কেন্দ্রে কোনো হামলা করেনি এবং সেখানে কর্মরত রুশ কর্মীদের নিরাপত্তার আশ্বাসও দিয়েছে। পূর্বে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই কেন্দ্রটিকে লক্ষ্য করেছে, কিন্তু পরে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বিবৃতি প্রত্যাহার করে তাকে 'ভুলক্রমে দেওয়া বিবৃতি' বলে উল্লেখ করেছেন।
পারমাণবিক হামলায় চেরনোবিলের মতো বিপর্যয় ঘটতে পারে
লিখাচেভ সতর্ক করে বলেছেন যে যদি কোনও দেশ বুশেহরের মতো পারমাণবিক কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে, তাহলে তার ফলাফল চেরনোবিলের মতো এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের আকারে প্রকাশিত হতে পারে। তিনি বলেছেন যে এই ধরণের কেন্দ্রগুলির নির্মাণ ও পরিচালনায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় এবং এগুলিতে হামলা বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
বুশেহর কেন্দ্রের গুরুত্ব
বুশেহর ইরানের একমাত্র চালু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যা রুশ প্রযুক্তি ও জ্বালানী নির্ভর। এই কেন্দ্রে ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম রাশিয়া থেকে আসে এবং ব্যবহারের পরে তা ফিরিয়ে রাশিয়ায় পাঠানো হয়, যার ফলে পারমাণবিক ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কম থাকে।
এই কেন্দ্রটি বহু বছর ধরে রাশিয়া ও ইরানের যৌথ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে মোট ৬০০ রুশ কর্মী নিয়োজিত আছেন, যার মধ্যে ২৫০ জন স্থায়ীভাবে এবং বাকিরা অস্থায়ী কাজে নিয়োজিত।
ইসরায়েল কর্মীদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়েছে: পুতিন
রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন বিবৃতি জারি করে বলেছেন যে বুশেহরে কর্মরত রুশ কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে ইসরায়েল আশ্বাস দিয়েছে। পুতিন বলেছেন যে বর্তমানে সেখানে নিয়োজিত প্রধান কর্মীরা তাদের কর্তব্য পালন করছেন, যদিও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কিছু কর্মীকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
লিখাচেভের মতে, শুক্রবার পর্যন্ত কেন্দ্রের অবস্থা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেছেন যে ইরানে চলমান সামরিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার পরও পারমাণবিক কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও পরিচালনায় কোন প্রভাব পড়েনি।
বুশেহর নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
বুশেহর কেন্দ্র নিয়ে পশ্চিমা দেশ এবং জাতিসংঘেরও নজর রয়েছে। কোনও ধরণের সামরিক কর্মকাণ্ড বা অসাবধানতা এই অঞ্চলে পারমাণবিক সংকটের সৃষ্টি করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও ইরান কর্তৃক কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে গ্রহণ করা পদক্ষেপ এবং ইসরায়েল কর্তৃক দেওয়া গ্যারান্টি একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে বাড়ছে যুদ্ধ
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বেড়েছে। ইসরায়েল কর্তৃক পরিচালিত আকাশ হামলার জবাবে ইরানও তীব্র পাল্টা দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ইরান ইসরায়েলি অঞ্চলগুলিকে ক্লাস্টার বোমা দিয়ে লক্ষ্য করেছে। এই ঘটনাগুলি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করেছে।