৩০ বছর বয়সী এক নারী সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন যে, অভিনেতা এজাজ খান তাকে চলচ্চিত্রে ভূমিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে তার সাথে ধর্ষণ করেছেন।
মুম্বই: টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা এজাজ খান আবারও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। পূর্বে তার ওয়েব সিরিজ ‘হাউস অ্যারেস্ট’ নিয়ে অশ্লীলতার অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার পর এবার এক নারী তার উপর ধর্ষণের গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। পীড়িতার অভিযোগ অনুযায়ী, অভিনেতা তাকে চলচ্চিত্রে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে বারবার তার যৌন নিগ্রহ করেছেন।
এই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত এফআইআর চারকোপ থানায় দায়ের করা হয়েছে এবং ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি)র ৩৭৬ ধারাসহ অন্যান্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
মহিলার অভিযোগের বিবরণ
৩০ বছর বয়সী ওই নারী পুলিশে দেওয়া অভিযোগে জানিয়েছেন যে, এজাজ খান তাকে চলচ্চিত্র শিল্পে সুযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন স্থানে তার সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। নারীটির দাবি, গত কয়েক মাস ধরে এ ঘটনা ঘটে আসছে এবং প্রতিবারই তাকে বলা হয়েছে যে, খুব শীঘ্রই তাকে বড় কোনও প্রোজেক্টে কাজ দেওয়া হবে।
নারীটি জানিয়েছেন, যখন তিনি অভিনেতার কাছে স্পষ্ট উত্তর চেয়েছিলেন, তখন তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং তাদের যোগাযোগও কমিয়ে দিয়েছেন। এরপর তিনি আইনি পথ অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পুলিশের পদক্ষেপ ও তদন্তের অবস্থা
চারকোপ থানার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে এজাজ খানের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলের সত্যতা যাচাই, সিসিটিভি ফুটেজ এবং মোবাইল কল রেকর্ড পরীক্ষা করছে। পুলিশের মতে, অভিযুক্তকে শীঘ্রই জিজ্ঞাসাবাদে ডাকা হতে পারে।
‘হাউস অ্যারেস্ট’ থেকে সৃষ্ট বিতর্ক এখনও থেমে নেই
এর আগে এজাজ খান উল্লু অ্যাপে প্রচারিত তার ওয়েব সিরিজ ‘হাউস অ্যারেস্ট’ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। শোতে প্রতিযোগীদের অশ্লীল কাজ করতে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ভাইরাল ভিডিওতে এজাজকে কিছু মহিলা প্রতিযোগীর সাথে আপত্তিকর প্রশ্ন করতে এবং অবাঞ্ছিত আচরণের জন্য বাধ্য করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও সেন্সরশিপের দাবি
শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বদী এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় শোয়ের একটি ভিডিও শেয়ার করে বলেছেন, এ ধরনের শো ভারতীয় সংস্কৃতি এবং নারীর সম্মানের বিরুদ্ধে। তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কাছে উল্লু অ্যাপে এ ধরনের কন্টেন্ট প্রচার বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, মহারাষ্ট্র ভারতীয় জনতা পার্টির মহিলা মোর্চার अध्यक्षा চিত্রা वाघ এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে শোটি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের কন্টেন্ট সমাজে অশ্লীলতা এবং নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ বৃদ্ধি করে।
আগামীর পথ এবং চলচ্চিত্র শিল্পের ইমেজের উপর প্রভাব
এজাজ খানের এই ঘটনা কেবল তার কর্মজীবনেই প্রভাব ফেলবে না, বরং এটি পুরো চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য আত্মমূল্যায়নের কারণ হয়ে উঠেছে। চলচ্চিত্র শিল্পে পূর্বেও কাস্টিং কাউচ এবং যৌন নিগ্রহের ঘটনা সামনে এসেছে, কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা শাস্তি পেয়েছে। এজাজ খানের ক্ষেত্রে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে এটি একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।
এখন পুলিশ ঘটনার গভীর তদন্ত করছে এবং সমাজও এই ঘটনার দিকে তাকিয়ে আছে। আগামী দিনগুলিতে দেখার বিষয়, এজাজ খান এই অভিযোগ থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন কিনা অথবা এই মামলা তার কর্মজীবনের অবসান ঘটাবে কিনা।