জুয়েল থিফ: দ্য হাইয়েস্ট বিগিন্স-এর গল্প, যেমনটি নাম থেকেই স্পষ্ট, একটি হীরার চুরির ঘটনার চারপাশে ঘোরে। লুটের গল্পটি যতক্ষণ পর্যন্ত কোনও নতুন টুইস্ট বা আকর্ষণীয় উপাদান নেই, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি কিছুটা সাধারণ মনে হতে পারে।
জুয়েল থিফ রিভিউ: নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জুয়েল থিফ: দ্য হাইয়েস্ট বিগিন্স’ ছবিটি হীরার চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এটি একটি সাধারণ গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা শুধুমাত্র চুরি এবং তার সাথে জড়িত সংঘর্ষের ষড়যন্ত্রে জড়িত মনে হয়। ছবিতে সাইফ আলি খান, জয়দীপ আহলাওয়াত এবং নিকিতা দত্ত প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, কিন্তু কি এই ছবিটি তার শিরোনাম এবং অভিনয়শিল্পীদের হিসেবে দর্শকদের আকর্ষণ করতে পারে? কি এটি লুটের সাধারণ গল্পে কিছু নতুন রোমাঞ্চ যোগ করতে পেরেছে? আসুন জেনে নেই এই ছবির পর্যালোচনা।
গল্পের পঙ্খা: গল্পের বাতাস কম, কিন্তু অভিনয়ের উষ্ণতা অব্যাহত
‘জুয়েল থিফ: দ্য হাইয়েস্ট বিগিন্স’ একটি এমন ছবি, যা একটি সাধারণ হীরার চুরির গল্পে নতুন মোড় দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু অনেক দিক থেকে এটি আশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ছবির প্লট মুম্বাইতে সেট করা হয়েছে, যেখানে গ্যাংস্টার এবং ব্যবসায়ী রাজন আওলখ (জয়দীপ আহলাওয়াত) একটি মূল্যবান হীরার চুরির পরিকল্পনা করে।
এই হীরা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মুম্বাই প্রদর্শনীর জন্য আনা হচ্ছে, এবং রাজন এটি কেড়ে নেওয়ার জন্য তার পুরানো সঙ্গী রেহান রায় (সাইফ আলি খান) কে ডাকে। রেহান, যিনি বর্তমানে বুদাপেস্টে বাস করেন, তার পিতার সাথে একটি দুর্ঘটনার কারণে এই চুরিতে জড়িত হতে বাধ্য হন। তার জন্য এটি শুধু একটি চুক্তি নয়, বরং ব্যক্তিগত প্রতিশোধের বিষয় হয়ে ওঠে।
ছবিতে রাজনের স্ত্রী ফারাহ (নিকিতা দত্ত) এর সাথে তার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হয়ে ওঠে, যা একদিকে টুইস্ট তৈরি করে। ছবির প্রধান আকর্ষণ ছিল এর লুটের দৃশ্য এবং টুইস্ট অ্যান্ড টার্নস, কিন্তু ছবিতে এই দুটি দিকেরই অভাব বোধ করা যায়। গল্পে কোথাও কোথাও সেই সংযোগ এবং রোমাঞ্চ দেখা যায় না, যা এ ধরনের ছবি থেকে দর্শকদের প্রত্যাশা থাকে।
অভিনয়: সাইফ আলি খান এবং জয়দীপ আহলাওয়াত
সাইফ আলি খান এবং জয়দীপ আহলাওয়াত উভয়েই শক্তিশালী অভিনেতা, কিন্তু এই ছবিতে তাদের ভূমিকা দুর্বল মনে হয়। সাইফ আলি খানের চরিত্র রেহান একজন চতুর এবং ধূর্ত চোর, যিনি নিজেকে একজন সাহসী এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন, কিন্তু তার অভিনয় ততটা কার্যকরী হয়নি। কোথাও কোথাও মনে হয় সাইফ তার পুরানো ছবির কিছু চরিত্রেরই পুনর্নির্মাণ করেছেন, যা তাকে এই ভূমিকায় একটি নতুন পরিচয় দিতে পারেনি।
জয়দীপ আহলাওয়াত এই ছবিতে গ্যাংস্টার রাজনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি একজন ভয়ঙ্কর ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হন। যদিও তার অভিনয় ভালো, কিন্তু ছবির চিত্রনাট্য এবং তার চরিত্রের গভীরতা তাকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী হতে বাধা দেয়। জয়দীপের চরিত্র অন্য কোনও ছবিতে অনেক শক্তিশালী হতে পারত, কিন্তু এখানে তিনি নিষ্প্রাণ মনে হন।
নিকিতা দত্তের চরিত্র ফারাহ বেশ গ্ল্যামারাস এবং আকর্ষণীয়। তিনি তার চরিত্রের সাথে ন্যায় করেন, এবং ছবিতে তার উপস্থিতিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা যেতে পারে। তার অভিনয় এবং ব্যক্তিত্ব ছবিতে একটি তাজা মাত্রা যোগ করে, যদিও তিনিও সম্পূর্ণরূপে অসাধারণ প্রভাব ফেলতে পারেননি।
সংলাপ এবং পরিচালনা
কুকি গুলাটি এবং রবি গ্রেওয়ালের পরিচালনা এই ছবির প্রধান ত্রুটিগুলির মধ্যে একটি। যেখানে একটি লুটের ছবিতে তাজা, রোমাঞ্চ এবং নতুনত্ব প্রয়োজন, সেখানে এই ছবিতে সবকিছু বেশ সাধারণ এবং প্রত্যাশিতভাবে ঘটে। সংলাপও একঘেয়েমি এবং অকার্যকর, যা ছবিটিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। অ্যাকশন এবং চুরির দৃশ্যগুলিও এমন, যা কোন গভীর প্রবাহের পরিবর্তে একটি সাধারণ ঢেউয়ের মতো মনে হয়।
ছবিতে পুলিশ এবং চোরের মধ্যে খেলার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু এটিও প্রত্যাশিত পর্যায়ে রোমাঞ্চকর হতে পারেনি। পুলিশ কর্মকর্তা বিক্রম প্যাটেল (কুনাল কাপুর)-এর চরিত্রে কোনও বিশেষ গভীরতা বা উৎসাহ নেই, এবং তিনি ছবিতে শুধুমাত্র একজন ঐতিহ্যগত পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দেখা যান। একই অবস্থা অন্যান্য চরিত্রেরও, যারা কোনও ধরণের প্রাণবন্ত উপাদানের অভাব বোধ করান।
সঙ্গীত এবং সমাপ্তি: কোন গুরুতর প্রভাব ছাড়াই
ছবির সঙ্গীতও খুব সাধারণ, এবং এটি ছবির গল্প বা চরিত্রের অনুভূতির সাথে যুক্ত হয় না। গান এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের প্রভাব কম, যা ছবির রোমাঞ্চক মুহূর্তগুলিকে আরও উন্নত করতে পারত। এছাড়াও, ছবির শেষে সিকুয়েলের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এটি ভালো হত যদি ছবিটি সম্পূর্ণভাবে শেষ হত এবং কোন অসম্পূর্ণতা অনুভূত না হত।
শেষ চিন্তাভাবনা: দেখবেন না দেখবেন?
‘জুয়েল থিফ: দ্য হাইয়েস্ট বিগিন্স’ একটি এমন ছবি, যা তার নাম অনুযায়ী দর্শকদের থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা জাগ্রত করে, কিন্তু এই প্রত্যাশা পূরণে এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। ছবির প্লট সাধারণ এবং পুরানো মৌলিক সূত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যাতে নতুন রোমাঞ্চ নেই, সংলাপে কোন গভীরতাও নেই।
সাইফ আলি খান এবং জয়দীপ আহলাওয়াতের মতো অভিনেতারাও তাদের ভূমিকায় মিলিয়ে যেতে ব্যর্থ হন। ছবির পরিচালনা এবং সঙ্গীতও দুর্বল, যা সম্পূর্ণ গল্পকে প্রভাবিত করে।
যদি আপনি পুরানো ঘষা-মাজা চোর এবং পুলিশের খেলার গল্পে কোনও নতুন টুইস্ট দেখার আশা করছেন, তাহলে এই ছবিটি আপনার জন্য নয়। যদিও, যদি আপনি কোন বেশি আশা ছাড়াই একটি হালকা-ফুফ্ফুলে ছবি দেখতে চান, তাহলে এটি দেখতে পারেন, কিন্তু খুব বেশি নতুন কিছু পাবেন না।