দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে জ্যোতিবা ফুলে এবং সাভিত্রীবাঈ ফুলে-এর জীবনকাহিনী নির্ভর ‘ফুলে’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। ছবিটির নির্মাণ এবং মুক্তির আগে বেশ কিছু বিতর্ক ঘিরে ছিল, যার ফলে এর মুক্তির তারিখ বারবার পিছিয়ে দিতে হয়েছিল।
ফুলে রিভিউ: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ‘ফুলে’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। এই ছবিটি ভারতীয় সমাজ সংস্কারক জ্যোতিবা ফুলে এবং তাঁর স্ত্রী সাভিত্রীবাঈ ফুলে-এর জীবনযাত্রার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যাঁরা কেবল ভারতীয় সমাজকে সচেতন করে তোলেননি, বরং নারীদের শিক্ষার অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। ছবিটির পরিচালক অনন্ত মহাদেবন এবং প্রতীক গান্ধী এবং পত্রলেখা মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
তবে, ছবিটি মুক্তির আগেই বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, যার ফলে এর প্রদর্শনে বিলম্ব হয়। এখন ছবিটি মুক্তি পেয়ে গেছে, আসুন জেনে নেওয়া যাক ছবিটি দর্শকদের কতটা প্রভাবিত করেছে এবং এটি কতটা সাফল্য পেয়েছে।
ছবির মুক্তির পূর্বে বিতর্ক
‘ফুলে’ ছবির ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই বিতর্কের ঝড় শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় ছবির কিছু দৃশ্যে আপত্তি জানিয়েছিল, যেখানে তাদের অপমানজনকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এরপর সেন্সর বোর্ড ছবির মুক্তির তারিখ পিছিয়ে দেয় এবং কিছু দৃশ্য পরিবর্তন করে। ১৮ এপ্রিল নির্ধারিত মুক্তির তারিখ স্থগিত করে ছবির মুক্তি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়। এরপর, ছবিতে সংশোধন করা হয় এবং অবশেষে বড় পর্দায় ছবিটি মুক্তি পায়।
ফুলে-এর গল্প: একটি সামাজিক পরিবর্তনের যাত্রা
‘ফুলে’ ছবিটি জ্যোতিবা ফুলে এবং সাভিত্রীবাঈ ফুলে-এর জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যাঁরা ভারতীয় সমাজের অন্যতম মহান সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। ছবিটি দেখায় কিভাবে উভয়ে সমাজে বিরাজমান জাতিবাদ, বৈষম্য এবং অজ্ঞতাবিরোধী লড়াই করেছিলেন এবং বিশেষ করে নারীদের জন্য শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।
সাভিত্রীবাঈ ফুলে, যিনি ভারতীয় ইতিহাসের প্রথম নারী শিক্ষিকা হিসেবে পরিচিত, এবং জ্যোতিবা ফুলে নারীদের শিক্ষা এবং তাদের অধিকারের জন্য দীর্ঘ লড়াই করেছিলেন। এই ছবিতে তাদের উভয়ের কষ্ট এবং সংগ্রাম দেখানো হয়েছে, যা তাদের সময়কালে সমাজের অসম্মতি এবং প্রতিবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
প্রতীক গান্ধী এবং পত্রলেখার চমৎকার অভিনয়
ছবিটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর চমৎকার অভিনয়। প্রতীক গান্ধী জ্যোতিবা ফুলে-এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং পত্রলেখা সাভিত্রীবাঈ ফুলে-এর চরিত্রে। উভয় অভিনেতার অভিনয় দেখার মতো। একজন ব্যবহারকারী তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘ফুলে’ ছবিটি দেখেছি এবং প্রতীক গান্ধী এবং পত্রলেখার অভিনয়ে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। প্রতীক গান্ধী তাঁর কর্মজীবনের সর্বোত্তম বায়োপিক পারফর্ম্যান্স দিয়েছেন। পত্রলেখাও তাঁর ভূমিকায় পুরোপুরি মানিয়ে গেছেন। উভয়ে মিলে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সাহসী গল্পকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন।
অন্যদিকে, আরেকজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ফুলে’ ছবিটি সমাজকে সচেতন করার একটি মাধ্যম। এই ছবিটি কেবলমাত্র বিনোদন নয়, বরং একটি বড় সামাজিক বার্তাও বহন করে। প্রতীক এবং পত্রলেখা উভয়েই অভিনয়ের মাধ্যমে সেই সংগ্রামগুলি তুলে ধরেছেন, যা এই দুই মহান সমাজ সংস্কারক তাঁদের জীবনে ভোগ করেছিলেন।
ছবিটি মিশ্রিত রিভিউ পেয়েছে
ছবিটি নিয়ে দর্শকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। কিছু দর্শক ছবির কন্টেন্টকে প্রশংসা করছেন, আবার কিছু কিছু ছবির গল্প এবং উপস্থাপনে কিছু ঘাটতি অনুভব করেছেন। বেঙ্গালুরুতে ছবিটির মাত্র একটি শো ছিল, যার ফলে ছবির প্রদর্শন সীমিত ছিল। তবে, একদিকে কিছু দর্শক এটিকে চমৎকার বলে মনে করছেন, অন্যদিকে আবার কেউ কেউ এটিকে কিছুটা ধীরগতির এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গুরুতর বলে মনে করেছেন।
ছবিতে একদিকে অভিনয় এবং পরিচালকের কঠোর পরিশ্রম লক্ষ্য করা যায়, অন্যদিকে কিছু দৃশ্য এবং সংলাপ নিয়ে সমালোচকদের মতামত যে, সেগুলি কিছুটা একঘেয়ে হতে পারে, বিশেষ করে যারা বেশি অ্যাকশন বা রোমান্সের আশা করে তাদের কাছে।
‘ফুলে’ ছবিটি দেখার মতো কিনা?
এই প্রশ্নটি এখন দর্শক এবং সমালোচকদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ‘ফুলে’ এমন একটি ছবি যা সামাজিক পরিবর্তনের দিকে একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প উপস্থাপন করে। যদি আপনি ভারতীয় সমাজের ইতিহাস, শিক্ষা এবং সমাজ সংস্কার সম্পর্কে গভীর তথ্য জানতে চান, তাহলে এই ছবিটি আপনার জন্য অবশ্যই দেখার মতো। ছবির গল্প সম্পূর্ণরূপে জ্যোতিবা ফুলে এবং সাভিত্রীবাঈ ফুলে-এর সংগ্রামকে তুলে ধরে, যা আজও ভারতীয় সমাজের জন্য প্রাসঙ্গিক।
তবে, ছবির ধীরগতি এবং কিছু দৃশ্য সম্ভবত সকল দর্শকের পছন্দ নাও হতে পারে, কিন্তু যদি আপনি একটি গভীর এবং আবেগঘন ছবির সন্ধানে থাকেন, তাহলে ‘ফুলে’ আপনার জন্য একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে।